প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২১, ০৬:১৫ পিএম
দিনমজুর বাবা কানু রামের ছেলে ফুলকুমার। কুড়িগ্রাম
জেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের উত্তর চাঁদের খামার গ্রামের বাসিন্দা। জীবনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে খেয়ে-না খেয়ে পড়াশোনা চালিয়েছিলেন ফুলকুমার। ছোটবেলা থেকে
তার স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পড়াশোনা করার। বাবার অভাবী সংসার হলেও পড়াশোনার
অদম্য ইচ্ছা ও প্রচেষ্টায় এবার ঢাবির মেধা তালিকায় স্থানও পেয়েছেন। কিন্তু সেই ইচ্ছা
আর স্বপ্নে বাঁধ সাধে টাকা। অর্থের অভাবে ভর্তি হতে না পেরে ফুলকুমারের স্বপ্নের ফুল
অকালেই ঝড়ে যাচ্ছে। উপায়ন্তর না পেয়ে ভর্তির টাকার জন্য ঘুরতেছে মানুষের দ্বারে দ্বারে।
জানা
যায়, ফুলকুমার এসএসসি পাস করার পর টাকার অভাবে বাহিরে কোনো কোচিংয়ে ভর্তি হতে পারেননি।
করোনাকালীন সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় কয়েকজন ছাত্র ফুলকুমারকে কোচিংয়ের
ব্যবস্থা করেছিল। পরবর্তীতে অর্থের সংকট ও তার পড়াশোনার প্রতি গভীর আগ্রহ দেখে কোচিং কর্তৃপক্ষ
ঢাকা, রাজশাহী ও গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার যাবতীয় খরচ বহন করেছিল।
ফুলকুমার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় ১৩৪তম স্কোর করেন। পরে সেখানেই
অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন এবং সর্বশেষ ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায়ও মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন। ঢাবি কর্তৃপক্ষ আগামী
৮ ডিসেম্বর সাক্ষাৎকারের জন্য ডেকেছে তাকে। কিন্তু টাকার অভাবে কীভাবে ঢাকা যাবে এবং
ভর্তি হবে এখনও জানেন না ফুলকুমার।
মানুষের
দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ভর্তির টাকার জন্য। জীবনের এ অবস্থায় এসে এভাবে থেমে যাবে তা স্বপ্ন? দিনমজুর বাবার কোনোভাবেই সন্তানের খরচ চালানের সাধ্য নেই। শুধু তিন
হাজার টাকা দেয়ার প্রতিশ্রতি মিলেছে। নতুবা তাদের শেষ সম্বল ১০ শতক জমি বিক্রি করতে
হবে। সেটিও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অথচ তিন দিন পরেই লাগবে ভর্তির টাকা।
এ
ব্যাপারে ফুলকুমার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে এ পর্যন্ত এসেছি।
পরনের যে শার্ট-প্যান্ট এগুলোও মানুষের দেয়া। স্বপ্ন দেখতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা
করব। সৃষ্টিকর্তা সেই স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হয়েছেন কিন্তু অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারছি
না এটা আমাকে বড়ই পীড়া দিচ্ছে। কেউ যদি আমার পাশে দাঁড়াত কিংবা একটা বৃত্তির ব্যবস্থা
করত। তাহলে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে একটা পার্টটাইম কাজ করে পড়াশোনাটা চালিয়ে
নিতে পারতাম।’
ফুলকুমারের বাবা কানু রাম জানান, ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি ওর খুবই আগ্রহ। কিন্তু টাকার অভাবে কিছুই দিতে পারিনি। নিজ মেধাগুণে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। আমি দিনমজুরি করে সংসার চালাই। ফসলি জমি বন্ধক রেখে ৯ হাজার টাকা দিয়ে আমার স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়েছি বাকি টাকা ওকে দিয়েছি। টাকার অভাবে এখন স্ত্রীর চিকিৎসাও বন্ধ। আমি নিরুপায় কি করব ভেবে পাচ্ছি না। কোনো সহৃদয়বান ব্যক্তি যদি এই দুঃসময়ে ছেলেটার পাশে দাঁড়াত তাহলে ছেলেটির অন্তত পড়াশোনাটা বন্ধ হতো না। অসহায় বাবা হয়ে সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি আমার ফুলকুমারের পাশে এগিয়ে আসুন।
ফুলকুমার স্থানীয় ঘোগাদহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪.৩৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে ২০২০ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
এএমকে/ডাকুয়া