প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২১, ০২:৫৭ এএম
দুর্নীতি দমন কমিশনের
(দুদক) মামলা দায়েরের ছয় দিন পর আবাহনী ক্লাব ভবন ও ডায়াবেটিক হাসপাতাল কমপ্লেক্স
নির্মাণকাজ শুরু করেছে বাগেরহাট পৌরসভা। মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে বাগেরহাট
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সড়কে আবাহনী ক্লাব ভবন ও ডায়াবেটিক হাসপাতাল নির্মাণের জন্য
নির্ধারিত জমিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কাজ শুরু হয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিশেষ বরাদ্দ হিসেবে পাওয়া এক কোটি টাকা দিয়ে বাগেরহাট পৌরসভার বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে এই কাজ শুরু করা হয়েছে। নির্ধারিত এই জমিতে প্রশিক্ষণ সেন্টারসহ চারতলা বিশিষ্ট আবাহনী ক্লাব ভবন ও আধুনিক ডায়াবেটিক হাসপাতাল কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাট পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কান্তি গুহ।
নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কান্তি গুহ বলেন, ‘বাগেরহাট আবাহনী ক্রীড়া চক্রের জন্য চারতলা বিশিষ্ট আবাহনী ক্লাব ভবন ও আধুনিক ডায়াবেটিস সোসাইটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। ডায়াবেটিস সোসাইটি হাসপাতালটি হবে মাল্টিপারপাস ও মাল্টি ফাংশনাল। এর অধীনে চারতলা, ছয়তলা ও দশতলা বিশিষ্ট ৩টি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসক চেম্বার, পেশেন্ট অপেক্ষা কক্ষ, ল্যাব ও টয়েলেট সুবিধা নির্মাণ করা হবে। বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে অন্যান্য কাজ সমাপ্ত করা হবে।বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, বাগেরহাটের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘এ প্রকল্পটি বাগেরহাটবাসীর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। পাশাপাশি আবাহনী ক্লাব ভবনের মাধ্যমে এলাকার যুব সমাজ খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী হবে। আমরা চাই অতি দ্রুত এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হোক।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাগেরহাট ডায়েবেটিক সমিতির সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোজাফফর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকিত ঝন্টু, বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. মো. মোশারফ হোসেন, বাগেরহাট পৌরসভার কাউন্সিলর আবুল হাসান শিপন, তালুকদার আব্দুল বাকি, রেজাউর রহমান মন্টু, মনিরুজ্জামান খান, কোহিনুর বেগম ডালিম, বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সভাপতি নিহার রঞ্জন সাহা, সাবেক সভাপতি আহসানুল করিম, মো. দেলোয়ার হোসেন, বাগেরহাট পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কান্তি গুহ, প্রকৌশলী রেজাউল করিম রিজভী, রায়হান হোসেনসহ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ডায়াবেটিক সমিতির সদস্যরা।
উল্লেখ্য, ২৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগেরহাট পৌরসভায় অবৈধভাবে নিয়োগ বাণিজ্য ও প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে সরকারি টাকাসহ দুই কোটি ২৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পৌর মেয়র খান হাবিবুর রহমানের নামে দুটি মামলা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের খুলনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক তরুণ কান্তি ঘোষ বাদী হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে পৃথক এ দুটি মামলা করেন। এর আগে ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমানের দুর্নীতি অনুসন্ধানে নামে দুদকের খুলনা কার্যালয়।
দুদক সূত্র জানায়, বাগেরহাট পৌরসভায় নিয়মবহির্ভূতভাবে ১৭ জনকে নিয়োগ দিয়ে সরকারি কোষাগার থেকে এক কোটি ২৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫৩ টাকা আত্মসাতের অপরাধে মেয়রসহ ১৮ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো বিধিবিধান ও বাছাই প্রক্রিয়া ছাড়া বিভিন্ন সময় এই ১৭ জনকে নিয়োগ দেন পৌর মেয়র খান হাবিবুর রহমান। পরস্পর যোগসাজশে এক কোটি ২৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫৩ টাকা আত্মসাৎ করেন।
এছাড়া, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ বাগেরহাটে আবাহনী ক্লাবের কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ এবং বাগেরহাট ডায়াবেটিক হাসপাতাল কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ না করে এক কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগে পৌর মেয়র খান হাবিবুর রহমান এবং বাগেরহাট পৌরসভার সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিমকে আসামি করে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়।
বাগেরহাট ডায়াবেটিকস হাসপাতাল এবং আবাহনী ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ বাবদ দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পৌর মেয়র খান হাবিবুর রহমান এই প্রকল্পের বরাদ্দের দুই কোটি টাকার মধ্য থেকে এক কোটি টাকা উত্তোলন করেন। কিন্তু কোনো কাজ না করে পৌর মেয়র এক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
দুদক প্রাথমিক অনুসন্ধানপূর্বক অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার, অসদাচরণ, বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণার অপরাধে বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। কমিশনের অনুমতিক্রমে মামলার তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেডআই/এম. জামান