প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২১, ০১:৩০ এএম
জন্ম থেকেই দুই
হাতে কব্জি না থাকলেও লেখাপড়া থেমে থাকেনি মেধাবী ছাত্র মোবারক আলীর। পিইসি এবং
জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি। শারীরিক
প্রতিবন্ধী মোবারক আলীর বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের
ধর্মপুর গ্রামে। তার পিতা দিনমজুর এনামুল হক।
সোমবার (২২
নভেম্বর) ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে
এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ৯ নম্বর কক্ষে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে গণিত
বিষয়ের পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। তার রোল নম্বর ২১৫৭৭৩। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায়
তাকে অতিরিক্ত সময় দেয়ার কথা থাকলেও বাড়তি সময় লাগেনি মোবারক আলীর। অন্য
শিক্ষার্থীদের মতোই নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে হল ত্যাগ
করেন তিনি।
মোবারক আলীর
পরিবার সূত্রে জানা যায়, জন্ম থেকে দুই হাতের কব্জি ছিল না
মোবারক আলীর। তাকে নিয়ে চিন্তায় ছিলেন তার অভিভাবকেরা। কী হবে তাকে দিয়ে। মোবারক
আলীর বেড়ে ওঠায় মা মরিয়ম বেগমের চেষ্টার কমতি ছিল না। ছেলের এমন অবস্থায় বিচলিত
হলেও ভেঙে পড়েননি তিনি। মায়ের সাহসে ছেলেকে স্কুলমুখী করে দুই হাতের কব্জি একখানে করে কলম দিয়ে খাতায় লেখার কৌশল শিখানো হতো তাকে। স্কুলে ভর্তির পর সহযোগিতা করে অন্য ছাত্ররাও। এভাবে পিইসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছেন তিন। ২০১৮ জেএসসি
(জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষায়ও পেয়েছেন জিপিএ ৫।
চলতি এসএসসি
পরীক্ষায় ওই কব্জিবিহীন দুই হাত একত্র করে খাতায় উত্তর লিখে যাচ্ছেন অদম্য মেধাবী
মোবারক আলী। দুটি হাতের আঙুল না থাকলেও সুস্থ স্বাভাবিক শিক্ষার্থীর মতোই পরীক্ষা
দিচ্ছেন তিনি।
মোবারক আলীর মা
মরিয়ম বেগম জানান, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সে বড়। সে নিজের
কাজগুলো নিজেই করতে পারে। ওর ইচ্ছাশক্তি প্রবল। আমরা অর্থনৈতিকভাবে
দুর্বল। তারপরও তাকে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
মোবারক আলী
জানান, হতদরিদ্র পরিবারে আমার জন্ম। কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। আমার
জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন ভালো রেজাল্ট
করে বাবা-মাসহ শিক্ষকদের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি।
কাশিপুর উচ্চ
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জায়দুল হক জানান, মোবারক প্রতিবন্ধী হলেও যথেষ্ট মেধাবী এবং পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও পারদর্শী। আমি আশা করছি, সে
ভালো করবে।
ফুলবাড়ী বালিকা
উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব গোলাম কিবরিয়া জানান, মোবারক
আলী অন্য শিক্ষার্থীদের মতোই প্রতিটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী
হওয়ায় তাকে বাড়তি সময় দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে নির্দিষ্ট সময়েই পরীক্ষার খাতায় লেখা
শেষ করছে।
এস/এম. জামান