• ঢাকা শনিবার
    ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

পীরের নির্দেশে ৩০ বছর ধরে জুতা ছাড়া চলাফেরা করেন জয়নাল

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২১, ১১:৪৬ পিএম

পীরের নির্দেশে ৩০ বছর ধরে জুতা ছাড়া চলাফেরা করেন জয়নাল

জুয়েল রানা, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

দুইবারের ইউপি সদস্য হয়েও ৩০ বছর ধরে জুতা ছাড়াই চলছেন জয়নাল আবেদীন (৬৬) কলেজে চাকরি, দুই দফায় পরিষদের ইউপি সদস্যের দায়িত্ব পালনসহ ব্যক্তি জীবনযাপনের পাশাপাশি জুতা ছাড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সামাজিক নানা কর্মকাণ্ড। এলাকায় তিনিজুতা ছাড়া মেম্বারহিসেবেই পরিচিত। জয়নাল আবেদীন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান মহানন্দাপুর বাশার চালা গ্রামের মৃত গফুর মিয়ার ছেলে। পেশায় তিনি একজন পোল্ট্রি খাবার বিক্রেতা।

স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ৩০ বছর ধরে জুতা ছাড়াই চলাফেরা করছেন জয়নাল মেম্বার। শীতবর্ষা কোনো সময়ই তিনি জুতা পরেন না। নিজ বাড়ি, অফিস আদালত, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির থেকে শুরু করে সর্বত্রই জুতা ছাড়া চলাফেরা করেন তিনি। এরপরও কখন শুনেনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। জুতা ছাড়া মেম্বার হিসেবে তিনি উপজেলাজুড়ে ব্যাপক পরিচিত বলেও জানান তারা।

স্থানীয় সত্তরোর্ধ্ব আব্দুর রহিম জানান, জয়নাল মেম্বার খুবই ভালো মানুষ। বিপদ-আপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো তার একটা ভালো গুণ। কারণে এলাকার মানুষ তাকে দুইবার ইউপি সদস্য নির্বাচিত করেছেন।

স্থানীয় মুসুল্লি আতোয়ার রহমান জানান, জয়নাল আবেদীন মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। দীর্ঘদিন যাবৎ তাকে জুতা ছাড়াই চলাচল করতে দেখছি। ব্যক্তি হিসেবে ভালো জনপ্রিয় হওয়ায় ইতোমধ্যে তিনি দুইবার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি কাকড়াজান ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের সংগঠনের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি জানান, আমরা শুনেছি তিনি পীর ধরা। পীরের নির্দেশেই তিনি জুতা ছাড়া চলাফেরা করেন।

জয়নাল আবেদীন জানান, ১৯৬৯ সালে কালিহাতী উপজেলার বর্তমান আউলিয়াবাদ কলেজে অফিস সহকারী পদে যোগদান করেন তিনি। ২০০০ সালে চাকরি থেকে অবসরে যান চাকরিরত অবস্থায় কালিহাতীর ডা. আজহারুল ইসলাম পীরের মুরিদ হন তিনি। জুতা ছাড়া চলাফেরা করার নির্দেশ দেন পীর সাহেব। সেই নির্দেশ অনুসারেই ৩০ বছর যাবৎ জুতা ছাড়া চলাফেরা করছেন। জুতা ছাড়া চলাফেরা করতে স্বাছন্দ্য বোধ করেন কারণে এলাকায় জুতা ছাড়া মেম্বার হিসেবে ব্যাপক পরিচিত তিনি।


তিনি বলেন, ‘চাকরি থেকে অবসরের পর নিজ এলাকায় পোল্ট্রির খাবার বিক্রির ব্যবসায় যুক্ত হই ব্যবসার পাশাপাশি এলাকার মানুষের বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার নিয়ে ইউপি নিবার্চনের প্রার্থী হই। বিগত ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০২ এবং বিগত ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের নিবার্চনের পূর্ব পর্যন্ত কাকড়াজান ইউনিয়নের নং ওয়ার্ডের মেম্বার নির্বাচিত হই। আমি কাকড়াজান ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যক্তি জীবনে আমি তিন মেয়ে এক ছেলের বাবা। ইতোমধ্যেই তিন মেয়ে জোহরা আক্তার, জয়নব আক্তার শিরিন আক্তারকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে সিয়াম আহমেদ এখন ৮ম শ্রেণির ছাত্র। পরিবারের সদস্যরাসহ সকলেই আমার এই ব্যতিক্রম জীবনযাপন মেনে নিয়েছেন।’

তিনি আরও জানান, জুতা ছাড়া চলাফেরা করতে তার কোনো সমস্যা হয় না। পিচের তৈরি পাকা সড়ক কিংবা কাঁচা সড়কে খালি পায়ে চলে তার পায়ে কখনও ব্যথা পাননি। জুতা ছাড়া চলাফেরা করতে তিনি স্বাছন্দ্য বোধ করেন অনেক উপকারও পেয়েছেন। জুতা ছাড়া চলাফেরা করার কারণে বড় ধরনের কোনো রোগব্যাধি হয়নি, কমেনি চোখের জ্যোতিও। এবারের নির্বাচনে পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও আজীবন তিনি জনগণের সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন

বিষয়ে কাকড়াজান ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. দুলাল হোসেন বলেন, ‘গুরুধরা মানুষ জয়নাল আবেদীন। গুরুর আদেশ মান্য করতেই তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ জুতা ছাড়া চলাফেরা করছেন। আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে ভালো মানুষ হিসেবে চিনি।’ তিনি দুইবার কাকড়াজান ইউনিয়নের পরিষদের সদস্য ছিলেন বলেও জানান দুলাল হোসেন

নূর/ডাকুয়া

আর্কাইভ