• ঢাকা শুক্রবার
    ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১

রাজশাহীতে হিমাগারের আলু নিয়ে বিপাকে চাষিরা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২১, ০৮:০০ পিএম

রাজশাহীতে হিমাগারের আলু নিয়ে বিপাকে চাষিরা

রাজশাহী ব্যুরো

আলু উৎপাদন মৌসুমের সময় করোনার কারণে চলছিল লকডাউন। সে সময় দামও ছিল কম। আলুচাষিরা লাভের আশায় হিমাগারে ৯৪ লাখ বস্তা আলু মজুদ করেছিলেন। এখন রাজশাহী হিমাগারগুলোতে ৬০ লাখ বস্তা আলু রয়েছে। কিন্তু সেই আলু বিক্রি করতে পারেনি তারা। আবার নতুন মৌসুম শুরু হতে যাচ্ছে। ফলে পুরনো আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

রাজশাহী জেলায় মূলত কার্ডিনাল, ডায়মন্ড অ্যাস্টেরিক জাতের আলু বেশি চাষ হয়। এসব আলুর ফলনও বেশি। এসব আলু এক বছরের বেশি হিমাগারে রাখাও সম্ভব নয়। তার ওপর আরেকটা আবাদ মৌসুম আসন্ন। এখন হিমাগার মালিকেরা আলু সরিয়ে নেয়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। ফলে কয়েক হাজার আলুচাষি মজুদ আলু নিয়ে খুব বিপদে পড়েছেন।

আলুচাষিরা জানিয়েছেন, মৌসুমে কম দামের কারণে হিমাগার ভাড়া করে আলু রাখা হয়। হিমাগার থেকে আলু ছাড়িয়ে বাজারে বিক্রি করার সাহস পাচ্ছেন না। এবার বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন দাম কমে যাওয়ায় হিমাগার ভাড়ার টাকাও পরিশোধ করতে পারছেন না। রাজশাহীর কয়েক হাজার আলুচাষি অর্থ সঙ্কটে আসন্ন মৌসুমে আবাদ করতে পারবেন কি না তাও অনিশ্চিত।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, গত মৌসুমে রাজশাহীতে ৩৯ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল। আলুর ফলন হয়েছিল লাখ ৭৫ হাজার টন। গত মৌসুমেও চাষিরা রাজশাহীর ৩৭টি হিমাগারে ৯৪ লাখ বস্তা আলু মজুদ রেখেছিলেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে বছরের অধিকাংশ সময় হাটবাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁ সামাজিক-রাজনৈতিক অনুষ্ঠানাদি বন্ধ ছিল। ফলে রাজশাহী থেকে রাজধানী ঢাকাসহ অন্য জেলাগুলোতে আলুর চালান হয়নি। ফলে মজুদ আলুর বেশির ভাগই হিমাগারে পড়ে আছে।

আলু চাষ করা আফজাল হোসেন মামুনুর রশীদ জানান, হিমাগার ভাড়া করে এবার ৩০০ বস্তা আলু রেখেছিলেন। বছর আলুর দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কেজিপ্রতি টাকা হারে প্রায় ২৫ হাজার কেজি মজুদ আলুতে তাদের ক্ষতি হবে অন্তত এক লাখ টাকা।

তানোরের বাণিজ্যিক আলুচাষি হারুনুর রশীদ শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রকারভেদে প্রতি বস্তায় আলু থাকে ৬০ থেকে ৮০ কেজি। গত মৌসুমে তারা হিমাগার থেকে নিম্নে ৩০ টাকা ঊর্ধ্বে ৪০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করেছিলেন। বছর হিমাগারে সর্বোচ্চ দাম মিলছে কেজিতে ১২ থেকে ১৩ টাকা। এক কেজি আলু আবাদে তাদের খরচই হয়েছে ১১ থেকে ১২ টাকা। তার ওপর এক বস্তা আলুর পরিবহন খরচ ৩০ টাকার সঙ্গে ২৫০ টাকা হিমাগার ভাড়া রয়েছে। গত মৌসুমে ৮০ কেজির প্রতি বস্তা গড়ে বিক্রি করেছেন হাজার ৮০০ টাকা দরে। বছর এখন পর্যন্ত ৮০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৯৬০ থেকে হাজার ৫০ টাকা করে। ফলে প্রতি বস্তায় তাদের ক্ষতি দাঁড়াচ্ছে অন্তত হাজার টাকা।

মোহনপুরের আলুচাষি আব্দুল মজিদ প্রামাণিক জানান, তিনি একটি হিমাগারে হাজার বস্তা আলু রেখেছিলেন। এখন আলু বিক্রির মৌসুম হলেও অধিকাংশ আলু হিমাগারেই আছে। ক্রেতা নেই। বাজারে আলুর খুচরা কেজি ২০ থেকে ২২ টাকা। আর পাইকারি দাম ১১ থেকে সাড়ে ১২ টাকা। আবাদ মৌসুম শুরু হলে কিছু আলু বীজ আকারে বিক্রি হবে, কিন্তু এখনই মজুদ আলু বিক্রি করা দরকার। হিমাগার ভাড়া পরিশোধ না করলে কর্তৃপক্ষ নিলাম করে ভাড়ার টাকা তুলে নেবে।

তবে মজুদ আলু নিয়ে হিমাগার মালিকেরাও বিপাকে আছেন জানিয়ে রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু বাক্কার আলী বলেন, স্থান এলাকাভেদে খুচরা বাজারে আলু প্রতি কেজি ২২ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি হলেও পাইকারি বাজারে দাম মাত্র ১২ থেকে ১৩ টাকা। ফলে চাষিরা বিপুল পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিপুল পরিমাণ মজুদ আলু নিয়ে হিমাগার মালিকেরাও বিপাকে আছেন। কারণ আগামী এক মাসের মধ্যে হিমাগার খালি করতে হবে। এখনও হিমাগারগুলোতে ৬০ লাখের বেশি বস্তা মজুদ রয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কে জে এম আব্দুল আউয়াল বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে লাগাতার লকডাউনসহ নানা সমস্যায় বাজারে আলু বিক্রি কমেছে। তবে আবাদ মৌসুম পুরোদমে শুরু হলে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আলুর দাম কিছুটা বাড়তে পারে।

নূর/এম. জামান

আর্কাইভ