• ঢাকা শনিবার
    ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

ঝুঁকি নিয়ে পারাপার, পা ফেললেই বিপদ!

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২১, ০৫:৪৬ পিএম

ঝুঁকি নিয়ে পারাপার, পা ফেললেই বিপদ!

জুয়েল রানা, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে গ্রামবাসীর অর্থায়ন স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি হচ্ছে অর্ধকোটি টাকার সেতু! ইতোমধ্যে ২০ লাখ টাকা খরচ করে সেতুটির ৪০ ভাগ কাজ শেষ করে আটকে গেছেন তারা। তাই সেতুর পিলারের ওপরে কাঠ বাঁশের মাচা করে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে দশ গ্রামের মানুষের। জেলা এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছে তাদের কাছে কেউ আসেনি আর জেলা প্রশাসক সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বলছেন বিষয়টি দুঃখজনক।

মির্জাপুরের গোড়াই ইউনিয়নের মীর দেওহাটা গ্রামটি লৌহজং নদী দ্বারা বিভক্ত। গ্রামের দক্ষিণ পাড়ের মানুষ নদী পার হয়ে উপজেলা সদর, দেওহাটা বাজার স্কুল-কলেজে এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল যাতায়াত করতে তাদের খেয়া নৌকায় পারাপার হতে হয়। ছাড়া অপর পাড়ের মানুষ নদী পার হয়ে তাদের আবাদি জমির ফসল আনা-নেয়া করেন স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও গ্রামবাসীর প্রয়োজনীয় এই সেতুটির দাবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা কর্তৃপক্ষ নজরে আসেনি তাই দুই বছর আগে নিজেরাই চাঁদা তুলে স্বেচ্ছাশ্রমে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করেন। যার প্রায় ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

মীর দেওহাটা গ্রামের খলিলুর রহমান জানান, ‘সেই ছোটকাল থেকে নৌকায় পার হয়ে থাকি এই নদীর এপার-ওপার। বেশ কিছু দিন আগে এলাকাবাসী সবার সঙ্গে কথা বলে আমরা একটি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেই। পরে এলাকাবাসী মিলে কিছু টাকা তুলে কাজ শুরু করি। এখন প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো কাজ করা হয়েছে তবে যে কাজ হয়ছে তা এখন একটি মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। পারাপারের সময় মনে হয় এই যেন পড়ে গেলাম।


ফারুক মিয়া নামের একজন জানান, ‘নিজেদের টাকা দিয়ে পর্যন্ত করেছি। এখন সরকার যদি ব্যবস্থা না নেয় তাহলে বাকি কাজ শেষ হতে সময় লাগবে আরও ১০ বছর। 

সত্তর বছর বয়সী আলেয়া বেগম বলেন, ‘এই দিক দিয়ে আসা হয় নাহ, আজকে আসলাম মনে হলো পা ফেললেই মৃত্যু অনিবার্য।

মির্জাপুর রাজাবাড়ি কলেজের ছাত্র আলমাছ বলেন, ‘প্রতিদিন কলেজে যেতে হয় ব্রিজের ওপর দিয়ে- মনে হয় কখন জানি পড়ে যাই। একটু অসতর্ক হলেই পড়ে যেতে হয়। সারা দেশে কত উন্নয়ন হচ্ছে আর আমাদের এলাকায় এই ছোট ব্রিজটাই হলো না। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলতে হয় আমাদের।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। বিষয়ে এখনও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে এখন যদি বাকি কাজটা করে দেয় তাহলে এলাকাবাসীর চলাচলে সুবিধা হবে।

সেতু নির্মাণের উদ্যোক্তা জলিল মোল্লা জানান, ‘এলাকাবাসীর কাছ থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা তুলে চল্লিশভাগ কাজ শেষ করেছি। আরও ত্রিশ লাখ টাকা না থাকায় আটকে আছে বাকি কাজ। সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। যাতে করে বাকি কাজটা করে দেয়।


টাঙ্গাইল জেলা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, ‘ওই এলাকার আশেপাশে আমাদের কোনো রাস্তা নাই। তাই বিষয়টি জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখে বিস্তারিত বলতে পারব।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক . আতাউল গনি বলেন, ‘এত দিনেও সেতু না হওয়া দুঃখজনক। পরিদর্শন করে সহযোগিতা করা হবে।

নদীর তলদেশের ১০ ফুট নিচ থেকে ঢালাই করে ৩২ ফুট উচ্চতার ৮টি পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। এতে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। সেতুর দৈর্ঘ্য ১৬০ ফুট প্রস্থ হবে ১১ ফুট। যা নির্মিত হলে অন্ততপক্ষে দশ গ্রামের লাখো মানুষের ভোগান্তি দূর হবে।

নূর/ডাকুয়া

আর্কাইভ