প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২১, ০২:১৪ এএম
কুড়িগ্রামের
উলিপুরে মন্দির ভাঙচুরের মামলায় গণগ্রেফতারের ভয়ে পুরুষশূন্য রয়েছে ১০ গ্রাম।
বিশেষ করে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িছাড়া হচ্ছেন তারা। ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত
হানার অভিযোগে অজ্ঞাতসহ ৭০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় গ্রামগুলোতে এ ঘটনার সৃষ্টি
হয়েছে। এতে করে আতঙ্কে রয়েছেন এ এলাকার বাসিন্দারা।
সরেজমিন ঘুরে
দেখা যায়, মামলার পর থেকে গুনাইগাছ ইউনিয়নের নেফড়া,
কালুডাঙ্গা
গ্রামের কাঠালীপাড়া, হাজীপাড়া, খারিজাপাড়া,
মৌলভীপাড়া,
পূর্বপাড়া,
কালুডাঙ্গাপাড়া
এবং থেতরাই ইউনিয়নের রামপ্রসাদ, হোকডাঙ্গা, কিশোরপুর,
বকশিপাড়া,
তেলিপাড়া,
থেতরাই
বাজার এলাকার ফকিরপাড়া, সাতদরগাহ্, বকশিরবাজার,
দালালীপাড়া,
মতুল্ল্যাটারী,
বকশিপাড়া,
নাপিতপাড়া,
হাজীপাড়া,
কানিপাড়া ও তেলিপাড়া
পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। ওইসব গ্রামে দিনের বেলা কিছু মানুষ চোখে পড়লেও সন্ধ্যা
নামার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে
গ্রামগুলো। এর ফলে হাটবাজারগুলোতে আগের মতো থাকে না কোলাহল। নতুন মানুষ দেখলেই
এড়িয়ে চলছে সবাই। বেচাকেনা না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত
লোকজন।
উপজেলার থেতরাই
ইউনিয়নের রামপ্রসাদ পাড়ার বাসিন্দা নুর হোসেন জানান, মামলার ভয়ে
দিনমজুর পাওয়া যাচ্ছে না। সবজিক্ষেত পরিচর্যা, বিক্রি করার
মানুষ না পেয়ে সমস্যায় পড়েছি। এ রকম হলে সামনে ধান কাটার মানুষ মনে হয় পাওয়া যাবে
না।
হাজীপাড়ার
বাসিন্দা জমিলা বেগম জানান, গ্রেফতারের ভয়ে বাড়ির পুরুষ মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পরিবার ও সংসারে বাজার করার জন্য মহিলারা বাজার-সদাই করছে। যেকোনো গাড়ির হর্ন শুনলেই বাচ্চারা ভয়ে কেঁদে ওঠে। রাতে ভয়ে আমরা কেউ ঘুমাতে পারছি
না।
বাজারের অটোচালক
খোরশেদ আলম জানান, আগে দিনে ৮০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হতো।
কিন্তু মামলার পর থেকে এলাকা পুরুষশূন্য হওয়ায় প্যাসেঞ্জার পাওয়া যাচ্ছে না। এখন
দিনে দুই-আড়াইশ’ টাকার বেশি কামাই হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে
উলিপুর থানা পুলিশ জানিয়েছে, গ্রামের মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য
পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শুধু ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের যাচাই-বাছাই করে আটক
করা হচ্ছে। দালাল চক্রের বিষয়টিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের নজরে এসেছে। সেটি
কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে।
চলতি বছরের ১৩
অক্টোবর কুমিল্লায় একটি মন্দিরে কোরআন শরিফ অবমাননার ঘটনায় কুড়িগ্রামের উলিপুর
উপজেলায় ৩টি ইউনিয়নের ৫টি মন্দিরে হামলা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মন্দির
ভাঙচুর ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে পৃথক ৫টি মামলায় ৭৯ জনের নাম
উল্লেখসহ প্রায় ৭ শতাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মন্দির ও পূজামণ্ডপ ভাঙচুরে রয়েছে পশ্চিম কালুডাঙ্গা ব্রাহ্মণপাড়া দুর্গামন্দির, পশ্চিম
কালুডাঙ্গা সার্বজনীন দুর্গা মন্দির ও নেফড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দির। এ ছাড়াও
থেতরাই ইউনিয়নে হামলা করা হয় হোকডাঙ্গা ভারতপাড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দির এবং
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে বেগমগঞ্জ সার্বজনীন দুর্গা মন্দির। এ সময় দুর্বৃত্তরা মন্দিরসহ
প্রতিমা ভাঙচুর, মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করে।
এ ব্যাপারে
উলিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু জানান, প্রকৃত
অপরাধীদের অবশ্যই আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। বাংলাদেশে
সম্প্রীতির বন্ধন নষ্ট করতে দেয়া যাবে না। তবে দালাল চক্র যাতে ফায়দা লুটতে না
পারে সে ব্যাপারে পুলিশকে সতর্ক থাকতে হবে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আসন্ন ইউনিয়ন
পরিষদ নির্বাচনে সেটি প্রভাব ফেলতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে
উলিপুর থানার ওসি মো. ইমতিয়াজ কবীর জানান, এখন পর্যন্ত ৫টি
পৃথক মামলায় ৬৬ জনকে আটক করা হয়েছে। বিভিন্ন তথ্য এবং ভিডিওর মাধ্যমে
দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। নিরীহ কেউ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে সে
ব্যাপারে পুলিশ সজাগ রয়েছে। আর গ্রামের সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য
পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এস/এম. জামান