• ঢাকা রবিবার
    ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২০ মাঘ ১৪৩১

ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা, নড়েচড়ে বসেছেন আদালত

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২১, ১০:০৭ পিএম

ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা, নড়েচড়ে বসেছেন আদালত

সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম ব্যুরো

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি থানার জনৈক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ইস্যু করা একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা যায় কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। গেল ১১ অক্টোবর সাইফুলকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। যার উপনথি চট্টগ্রামে এলে দেখা যায় পরোয়ানাটি ছিল পুরোটাই ভুয়া।

এই ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেন সিএমএম আদালত। দেশের প্রতিটি থানায় চিঠি পাঠিয়ে গেল তিন মাসে এমন ১৪টি ভুয়া ওয়ারেন্টের সন্ধানও মিলেছে। বিষয়টিতে উদ্বেগ জানিয়ে ওই ১৪টি ভুয়া ওয়ারেন্টকে ভিত্তি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়েছে। চক্রটিকে ধরতে প্রশাসনকে তৎপর হওয়ার তাগিদও দিয়েছে আদালত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, কিশোরগঞ্জ ছাড়াও পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ, লালমনিরহাটসহ দেশের ১৪টি থানায় ভুয়া ওয়ারেন্ট পাঠানোর তথ্য পাওয়া গেছে। বিচারকের সিল স্বাক্ষরের জাল করার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহৃত ফরমগুলো ব্যবহার করে ওয়ারেন্ট বানানো হয় এবং রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এসব ওয়ারেন্ট পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট থানায়। আসল ওয়ারেন্টের মতো দেখতে এসব ভুয়া ওয়ারেন্টের সত্যতা যাচাই করতে বেগ পেতে হচ্ছে মাঠ পর্যায়ের থানাগুলোকেও। ফলে হয়রানির স্বীকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী জানান, দেশজুড়ে বড় একটি চক্র এই ধরনের প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত। দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের ব্যক্তিগত শত্রুতার সুযোগ নিয়ে একপক্ষের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করে অন্যপক্ষকে ফাঁসাতে এই ধরনের অপরাধমূলক কাজ করছে তারা। যেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে আদালতের মতো একটি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানকে। দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের ঘটনা ঘটলেও এবার সবচেয়ে বড় আকারে ঘটেছে। প্রশাসন এই চক্রটিকে ধরতে না পারলে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হওয়ার পাশাপাশি আদালতের ভাবমূর্তিও হুমকির মুখে পড়বে। 

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, আদালতের কাজে ব্যবহৃত ফরমগুলো যত্রতত্র পাওয়া যওয়ায় এই ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড বাড়ছে। এছাড়া আদালত আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এমন প্রতারণার অভিযোগ চলে আসলেও অপরাধীরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ চাইলে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিকতার পাশাপাশি, আদালতের কার্যক্রমগুলো ডিজিটালাইজেশন করা বিকল্প নেই। বিশেষ করে ওয়ারেন্টের বিষয়গুলো অনলাইন করতে হবে। যাতে দেশের যেকোনো থানা থেকে সহজেই ওয়ারেন্টের বিষয়গুলো যাচাই করা সম্ভব হয়।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এনামুল হক জানান, গেল ১০ বছর ধরেই এমন অভিযোগ চলে আসছে চট্টগ্রামের আদালত ভবনকে ঘিরে। এবার প্রথম মামলা হলেও বিষয়গুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানে। কিন্তু এই প্রতারকচক্রকে ধরতে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা।

 

টিআর/ডাকুয়া

আর্কাইভ