প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২১, ১০:১৩ পিএম
স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা জলদস্যুদের মধ্যে যারা আবারও বিপথে যাবেন, তাদের পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে
সতর্ক করেছেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল কে এম আজাদ। তিনি বলেন, যেকোনো উপায়ে আমরা এ সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করে রাখব। নতুন করে কোনো জলদস্যু
যেন দল করতে না পারে, কোনো ইন্ধনদাতা যেন এ সমস্যা জাগিয়ে তুলতে না
পারে, সেজন্য আমরা সব সময় সজাগ আছি।
সোমবার (১ নভেম্বর) দুপুরে বাগেরহাটের রামপালে দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবসের
তৃতীয় বর্ষপূর্তি ও আত্মসমর্পণকারীদের পুনর্বাসন অনুষ্ঠান-২০২১ উপলক্ষে তিনি এসব
কথা বলেন।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের
সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আসাদুজ্জামান খান কামাল।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, সুন্দরবনকে
দস্যুমুক্ত রাখতে র্যাবের সব সদস্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। আমাদের গোয়েন্দারা
সব সময় নজরদারি রাখছেন, পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছেন।
কর্নেল কে এম আজাদ বলেন, আমি এতটুকু বলে দিতে চাই, কেউ যদি এ সুযোগ নিতে শুরু করে তাহলে র্যাব সদস্যরা তাদের খুঁজে বের করে
আইনের আওতায় আনবে। কেননা র্যাব আগের চেয়ে আরও বেশি দায়িত্ব পালনে সক্ষম।
প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের কারণে এখন আগের অবস্থান থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ভূমিকায়
দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছে র্যাব। আমি বলতে চাই, যারা বিপথে যাবেন, তাদের পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যেকোনো উপায়ে আমরা এ সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত
করে রাখব।’
কর্নেল আজাদ আরও বলেন, সাবেক গোয়েন্দা প্রধান শহীদ লে. কর্নেল আজাদসহ
যেসব সদস্য জীবন দিয়েছেন তাদের কারণে র্যাব ১৭ বছরের অবস্থান তৈরি করেছে। তাদের
প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও সম্মান রইল। ২০১৮ সালের এই দিনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায়
সুন্দরবনের বিশৃঙ্খল জীবনের অবসান ঘটেছিল। তিনি এ দিনে দস্যুমুক্ত সুন্দরবন ঘোষণা
করেছিলেন। সুন্দরবনে এই জলদস্যু দমনে যে আভিযানিক কৌশল এবং বাস্তবায়ন, এটি একটি যুগান্তকারী মাইলফলক। র্যাবের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রধানমন্ত্রীর যে
নির্দেশনা তার টেকসই অর্থাৎ স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। বর্তমানে আমরা যে পরিবেশ
সৃষ্টি করেছি, সেই পরিবেশকে ধরে রাখতে চাই।
তিনি বলেন, ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে র্যাব
মহাপরিচালককে প্রধান সমন্বয়কারী করে সুন্দরবনে জলদস্যু দমনে টাস্কফোর্স গঠন করা
হয়। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ
করেছে। এর মধ্যে পার্বত্য শান্তি প্রক্রিয়া, চরমপন্থিদের
স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা, মাদক এবং জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি
ঘোষণা করা। সেই সঙ্গে সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত করা।
জলদস্যুদের উদ্দেশ্যে র্যাব এডিজি বলেন, আপনারা সত্যের
পথে থাকুন, যত দিন সুপথে থাকবেন তত দিন আমাদের সহায়তা
অব্যাহত থাকবে এবং ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। এক বছর ধরে র্যাব মাঠপর্যায়ে
পুনর্বাসন চাহিদা সমীক্ষা চালিয়ে আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের তালিকা তৈরি করেছে।
তাদের মধ্যে ১০২টি ঘর, ৯০টি মুদি দোকান (মালামালসহ), ১২টি জাল ও মাছ ধরার নৌকা, আটটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা এবং ২২৮টি গবাদি পশু
বিতরণ করা হয়েছে, যা তাদের জীবন ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর
আহমদ, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল
খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী
কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু,
খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য
শেখ সালাহউদ্দিন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী
কমিটির সদস্য মো. হাবিবুর রহমান,
পীর ফজলুর রহমান, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার ও স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন।
শামীম/এম. জামান