• ঢাকা শনিবার
    ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

‘কলিজা বিক্রি করে যদি ওর চিকিৎসা করতে পারতাম’

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২১, ১০:৫৩ পিএম

‘কলিজা বিক্রি করে যদি ওর চিকিৎসা করতে পারতাম’

কাসেমুর রহমান শ্রাবণ, মাগুরা প্রতিনিধি

আমার একমাত্র ছেলেটা কি সুন্দর করে হাসে! ওর হাসি দেখলে মনে হয় নিজের কলিজা বিক্রি করে যদি ওর চিকিৎসা করতে পারতাম। ওর চোখে আলো আনতে তাই করতাম। জীবনে তো কারও কোনো ক্ষতি করিনি, তাহলে আল্লাহ আমাদের কেন এত কষ্ট দিলেন জানি না। ছেলেটির যদি চিকিৎসার জন্য কেউ এগিয়ে আসত তবে আজন্ম তার গোলাম হয়ে থাকতাম।

 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মাগুরা শহরের দরি মাগুরা কারিকর পাড়া এলাকার দিনমজুর হেলাল হোসেনের স্ত্রী হাসিনা বেগম। তাদের পাঁচ বছর বয়সী একমাত্র সন্তান আল আমিন। আর পাঁচটা শিশু যখন বন্ধুদের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। আল আমিন তখন অন্ধকারকে সঙ্গী করে বেড়ে উঠছে। সেই সঙ্গে বাবা-মায়ের জন্য বয়ে এনেছে একরাশ হতাশা।

 

এখন তাদের মনে হাজারও প্রশ্ন খেলা করছে- জন্মই কি আল আমিনের আজন্ম পাপ হয়ে রবে? পিতা-মাতার দারিদ্র্যের কশাঘাতের কাছে কি হেরে যাবে তার পৃথিবীর আলো দেখার স্বপ্ন? কেউ কি নেই তার এ স্বপ্ন পূরণ করতে এগিয়ে আসার মতো?

 

আল আমিনের বাবা দিনমজুর হেলাল হোসেন সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ছোটবেলা বাবা-মাকে হারিয়ে ভবঘুরে জীবন কাটিয়েছি। এক সময় মাগুরা শহরের দরি মাগুরা এলাকার আর এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হাসিনা বেগমকে বিয়ে করে সুখের আশায় ঘর বাঁধি। দীর্ঘ আট বছর সংসার করার পর ২০১৬ সালে আমাদের সংসারে জন্ম হয় আল আমিনের। কিন্তু ফুলের মতো ফুটফুটে সন্তানের এ জন্মের আনন্দ আমাদের স্থায়ী হলো না। জন্মের পর ডাক্তাররা বললেন তার চোখের মণির ওপর পুরু একটি সাদা স্তর। চিকিৎসকেরা জানালেন এ কারণেই শিশুটি জন্মান্ধ। যদিও তারা আশা প্রকাশ করেন পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসা দিতে পারলে শিশুটি হয়তো তার চোখের জ্যোতি ফিরে পেতে পাবে।

 

তিনি আরও বলেন, আনন্দের স্থলে একরাশ দুঃখ নিয়ে শিশু সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। পরে মাগুরার চক্ষু চিকিৎসক ও তাদের পরামর্শে ঢাকায় চক্ষু চিকিৎসকদের দেখালে তারা অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে আরও উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে তার শিশুটির চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে জানিয়েছে তারা। তবে আল আমিন চোখে আলোর অস্তিত্ব টের পায়। ঘরে বিদ্যুৎ চলে গেলে সে বুঝতে পারে অন্ধকার হয়ে গেছে। আমার বিশ্বাস ভালো চিকিৎসা করাতে পারলে ও চোখে দেখতে পারত। কিন্তু দিন আনা দিন খাওয়া অভাবের সংসারে আল আমিনকে নিয়ে ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন অবস্থান করা অসম্ভব।

 

হেলাল হোসেন বলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য কমপক্ষে ২ লাখ টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু রাজমিস্ত্রির হেল্পার হিসেবে কাজ করে আমার যেখানে সংসার চালানো কষ্টের, সেখানে ২ লাখ টাকা জোগাড় করা একেবারেই অসম্ভব। এ অবস্থায় সমাজের হৃদয়বান মানুষেরা এগিয়ে এলে আমি হয়তো বাচ্চাটির চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে আনতে পারব।

 

মাগুরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আব্দুল্লাহ আল-কাফি জানান, শিশুটি জন্মগতভাবে অন্ধত্বের শিকার। এর উন্নত চিকিৎসা ব্যয়বহুল। তবে সে যেহেতু আলো দেখতে পায়, উন্নত চিকিৎসা করলে শিশুটি তার চোখের জ্যোতি ফিরে পেতে পারে।

 

মাত্র ৫ বছর বয়সের শিশু আল আমিনের চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে আনতে যে টাকা প্রয়োজন তা জোগাড় করতে সমাজের বিত্তবান ও সহৃদয় মানুষের সহায়তা চেয়েছে তার পরিবার। আল আমিনকে সহায়তা পাঠাতে চাইলে শিশুটির মা হাসিনা বেগমের ০১৭৯৪২১৫০৩২ নম্বরে বিকাশ ও নগদ অথবা অগ্রণী ব্যাংক, মাগুরা ভায়নার মোড় শাখায় অ্যাকাউন্ট নম্বর ০২০০০১৭৫৫৩০৫৪-এ সহায়তা পাঠাতে পারেন। 


টিআর/এম. জামান

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ