• ঢাকা শনিবার
    ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১

ফাঁদে ফেলে বিবস্ত্র ছবি তুলে টাকা আদায়, এক তরুণী গ্রেফতার

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২১, ০২:৫৮ এএম

ফাঁদে ফেলে বিবস্ত্র ছবি তুলে টাকা আদায়, এক তরুণী গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রতারণা করে টাকা আদায়ের অভিযোগে পুলিশ নুরিতা ওরফে প্রিয়া ওরফে সুরাইয়া (২৩) নামে এক তরুণীকে গ্রেফতার করেছে। একই সঙ্গে নুরিতার ফাঁদে পড়া আরও এক কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে।

চেহারা সুন্দর ও বিউটি পার্লারে কাজ করেন এমন উঠতি বয়সী মেয়েদের টার্গেট করে নাটক, সিনেমায় মডেল বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ফাঁদে ফেলতেন সুরাইয়া। তারপর তাদের জোর করে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হতো। এ ছাড়া তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হতো। এমনকি অনেককে পতিতাবৃত্তিতেও বাধ্য করা হতো।

উপজেলার হাসনাবাদ মোকামপাড়া এলাকা থেকে গত সোমবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ওই তরুণীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবির। বুধবার (২৭ অক্টোবর) সকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই চক্রের মূল হোতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

নুরিতার দেওয়া তথ্যের বর্ণনা দিয়ে ওসি বলেন, ‘চক্রটি প্রথমে মোবাইল ফোনে উঠতি বয়সী তরুণীদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে মেসেজ ও ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরে টার্গেট তরুণীকে টিভি নাটক ও ইউটিউবে মডেল হিসেবে নাটক তৈরি করার জন্য অভিনয় করতে নির্ধারিত স্থানে আসতে বলেন। আসার পরে প্রতারক চক্রের লোকজন তাকে একটি সিএনজি অথবা মাইক্রোবাসে তোলেন এবং মডেলের হাতে একটি স্কিপ্ট দেওয়া হয়।

ইতোমধ্যে মাইক্রোবাস বা সিএনজিটি একটি অচেনা জায়গায় থামে। সেখানে একটি বাড়ির রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে মডেলকে অপহরণ দৃশ্যের অভিনয়ের কথা বলে হাত-পা বাঁধে। এরপর অভিনয়ের কথা বলে মডেলকে বিবস্ত্র করে নানান ছবি তোলেন। পরে সেই ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দে্ওয়ার ভয় দেখিয়ে তরুণীর অভিভাবকদের কাছে ফোনে যোগাযোগ করে ও মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করেন। টাকা পেয়ে ভুক্তভোগী তরুণীর চোখ বেঁধে অচেনা স্থানে ফেলে রেখে আসেন। আর যারা টাকা দিতে ব্যর্থ হন তাদের দিয়ে জোরপূর্বক আটক রেখে দেহ ব্যবসা করানো হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘মডেল বানানোর নামে তরুণীদের ডেকে এনে পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করা এই চক্রটি সোনিয়া নামে এক তরুণীকে এভাবে প্রলোভন দেখিয়ে আটক করেন। মারধর সহ্য করতে না পেরে আত্মীয়স্বজনের কাছে ফোন করে মুক্তিপণের জন্য ৮ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে এনে দেন সোনিয়া। পরবর্তীতে সোনিয়ার মোবাইল ফোন ও তার ব্যবহৃত স্বর্ণালঙ্কার প্রতারক চক্রটি রেখে তাকে চোখে কালো চশমা পরিয়ে রাতের অন্ধকারে বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকায় ঝোপের মধ্যে ফেলে যায়। সেখান থেকে বাসায় ফিরে পরদিন সকালে ওই তরুণী দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় এসে অভিযোগ করেন।’

পুলিশ মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ মোকামপাড়া এলাকায় নান্নু মিয়ার মিয়ার বাড়ির দ্বিতীয় তলায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় চক্রের মূল হোতা নুরিতাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের অবস্থান বুঝতে পেরে নুরিতার সহযোগী মারুফ পালিয়ে যান। মারুফ ও তার কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেফতারে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

পুলিশ জানায়, নুরিতার নামে পর্নোগ্রাফি আইন, প্রতারণা, অপহরণ ও মানব পাচার আইনে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই তরুণীর বিরুদ্ধে ঢাকার আশুলিয়া থানায় প্রতারণা মামলা আছে।

 

শামীম/এম. জামান

আর্কাইভ