প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২১, ০১:৪৬ এএম
নবম ও দশম শ্রেণিতে দুই বছর
যথারীতি লেখাপড়া করে ক্লাস পরীক্ষা ও টেস্ট পরীক্ষায় পাস করে এসে এসএসসি পরীক্ষার ফরম
ফিলাপ করতে গিয়ে জানতে পারল জেএসসিতে ফেল। এতে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারছে না এক শিক্ষার্থী।
এ যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। কিন্তু এমন বাস্তব ঘটনাই ঘটেছে নীলফামারীর
সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ে।
জানা যায়, ওই শিক্ষার্থীর বিগত
প্রায় ৪ বছরের সব পরিশ্রমসহ শিক্ষাজীবনের চরম বিপর্যয় ঘটলেও নির্বিকার প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
নিজেদের ভুল শিকার করার পরিবর্তে তারা উল্টো মৃত প্রধান শিক্ষকের দোহাই দিয়ে অভিভাবককেই
দোষারোপ করে চলেছেন। এতে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিপাকে পড়েছে অসহায় দরিদ্র পরিবার।
শিক্ষার্থীর বাবা বোতলাগাড়ী
ইউনিয়নের মো. জামিল উদ্দিন জানান, তার ছেলে মোসাদ্দেক আলী এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী।
কিন্তু কয়েকদিন আগে স্কুল থেকে জানানো হয় সে পরীক্ষা দিতে পারবে না। কারণ জেএসসি পরীক্ষায়
(অষ্টম শ্রেণিতে) এক বিষয়ে সে ফেল করেছিল। সে বিষয়ে সম্পূরক পরীক্ষা না দেয়ায় তার জেএসসির
সনদপত্র পাওয়া যায়নি। অথচ কয়েকদিন আগে স্কুলের কেরানি (অফিস সহকারী) মো. রাসেদুল ইসলাম
বোর্ডে সামান্য ভুল আছে তা শোধরানোর জন্য এক হাজার টাকা চেয়ে নেন আমার কাছ থেকে। এখন
বলছে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
প্রশ্ন হলো— আমার
ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে ফেল করে থাকলে তাকে কীভাবে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয় এবং কেমন
করে সে নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করল এবং টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে পাসও করল? এত দিন তারা
বিষয়টি কেন জানায়নি? কেন তারা আমার ছেলের জীবনের এত বড় ক্ষতি করল? এর দায় কার? এখন
তারা বলছে এত দিন যা খরচ হয়েছে তা দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘তারা কি আমার ছেলের
বিগত সময়গুলো ফিরিয়ে দিতে পারবে? পারবে তার শিক্ষাজীবনের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে? পারবে
না। মূলত কেরানির মাধ্যমেই আমার ছেলেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছি। কোনো প্রকার ভুল
হয়ে থাকলে তিনিই করেছেন। তার কারণেই একজন শিক্ষার্থীর এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।
তিনি প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আমাদের বিপদে ফেলেছেন।’
এর মধ্যে বোতলাগাড়ী মাঝাপাড়ার
রমজান আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম, নাজমুল হকের ছেলের ক্ষেত্রেও একইভাবে এসএসসি পরীক্ষার
ফরম ফিলাপের সময় জানতে পারে যে তারা জেএসসিতে পাস করেনি। এতে এই শিক্ষার্থীদের জীবনও
এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্কুলের অফিস সহকারী
রাসেদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, যা করেছি প্রধান শিক্ষক মৃত মোখলেছুর রহমানের
নির্দেশেই করেছি। ভুল হয়ে থাকলে তা প্রধান শিক্ষকের। এ ক্ষেত্রে আমার কোনো দোষ নেই।
নবম শ্রেণিতে ভর্তির সময় কেন তার কাগজপত্র না দেখেই তাকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা
করানো হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা মিসটেক হয়েছে। অনেক সময় এমন হয়।
সৈয়দপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা
অফিসার রেহানা ইয়াসমিন মুঠোফোনে জানান, এ ধরনের কোনো বিষয় তার জানা নেই। তাবে এমন হয়ে
থাকলে তা সদ্য মৃত প্রধান শিক্ষক কীভাবে করে গেছেন তা তদন্ত করতে হবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী
ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অফিস সহকারী যদি এর সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তার ব্যাপারেও বিভাগীয়
ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিহত প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী
সৈয়দপুর শহরের মিস্ত্রিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হালিমা বেগম
জানান, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে দোষারোপ করে অনেকেই নিজের অপরাধ ঢাকতে চাচ্ছেন।
কিন্তু আমার স্বামী কোনোভাবেই কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
এএমকে/এম. জামান