
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২১, ১১:৪৩ পিএম
মো. আমিরুজ্জামান, নীলফামারী প্রতিনিধি
অযত্ন-অবহেলায় এখন ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে বিনোদন কেন্দ্রের ফিদা-আলী মিলনায়তন। দিনরাত এসব কেন্দ্রে চলে বখাটে নেশাখোরদের আড্ডা। নষ্ট হয়ে গেছে ২০ লাখ টাকার সম্পদ। অনেকেই বিনোদন কেন্দ্রটিকে এখন ভূতের বাড়ি নামেই চেনে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৮৭০ সালে স্থাপিত হয় রেলওয়ে কারখানা। রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনোদনের জন্য গড়ে তোলা হয় তিনটি বিনোদন কেন্দ্র। প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব কলোনিতে রেলওয়ে অফিসার ক্লাব, দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য সাহেবপাড়ায় স্টেশন সংলগ্ন মূর্তুজা ইনস্টিটিউট এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য শহরের ইসলামবাগে ফিদা-আলী মিলনায়তন। এসবের মধ্যে ফিদা-আলী মিলনায়তনটি প্রায় তিন একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
এখানে রয়েছে প্রেক্ষাগৃহ আকৃতির টিনের চালার এক বিশাল হল। এর উত্তর পাশে ভলিবল ও ব্যাডমিন্টন খেলার গ্রাউন্ড। এর পশ্চিমে খোলা জায়গা ও ফুটবল-ক্রিকেট খেলার বিশাল মাঠ। মাঠটি ঈদের নামাজের জন্যও ব্যবহার হয়ে থাকে। দক্ষিণে ছিল বিশাল আকৃতির একটি পুকুর। কর্মস্থল রেলওয়ে কারখানা থেকে ফিরে সন্ধ্যার পর থেকেই শ্রমিক-কর্মচারীদের পদচারণায় মুখরিত থাকত। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানে টেলিভিশনের অনুষ্ঠানমালা দেখতে যেতেন। ছিল খেলার নানা উপকরণ। আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা ধরনের বিনোদন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো এখানে।
রেলওয়ে কারখানায় ৩ হাজার ২৮৪ জন জনবলের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১ হাজার ৭০৪ জন। দিন দিন সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় সেখানে এখন আর কোনো শ্রমিক-কর্মচারীর দেখা মিলে না। বছরের পর খোলা হয় না বিনোদন কেন্দ্রটির দরজা। দখল হয়ে গেছে বেশির ভাগ জমি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, অযত্ন, অবহেলা আর তদারকির অভাবে বিনোদন কেন্দ্রটির দরজা-জানালা ভেঙে ভুতুড়ে ঘরে রূপান্তরিত হয়েছে। ভেতরে ঢুকে ডান পাশেই অনুষ্ঠানের জন্য নির্মিত মঞ্চ। মঞ্চটি এখন ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নষ্ট হয়ে পড়ে আছে বসার বেঞ্চ ও চেয়ার। খুলে গেছে চালার বেশ কিছু টিন। ভলিবল ও ব্যাডমিন্টন খেলার গ্রাউন্ডটির চারপাশে জন্মেছে বড় বড় আগাছা। স্থানীয়রা গ্রাউন্ডে গোবর শুকাচ্ছেন। এর আশপাশে বিভিন্ন দলে বিভিক্ত হয়ে নেশা করছে কিংবা জুয়ার আসর বসিয়েছে বখাটেরা।
ইসলামবাগ বড় মসজিদ এলাকার বাসিন্দা রেল কর্মচারী মিজানুর রহমান বলেন, এক সময় এখানে এসে অবসর সময়টুকু বিনোদনের মাধ্যমে কাটাতাম। কিন্তু এটি না খোলা থাকায় অনেক সময় এসেও ফিরে যেতে হয়। পরিবার নিয়ে যে এখানে বিনোদনের জন্য আসব, সেই উপয়াটুকুও নেই। যখনই আসি দেখি এখানে বখাটেরদের নেশার ও জুয়ার আড্ডা।
বিনোদন কেন্দ্রটির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও রেলওয়ে কারিগরি পরিষদ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা শাখার ও কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হবিবুর রহমান বলেন, দিন দিন কমছে রেলওয়ের শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা। তাছাড়া বিনোদনের মাধ্যম বেড়ে যাওয়ায় যারা আছেন তারা এখন খুব একটা আসেন না। তবে বিনোদন কেন্দ্রটি সংস্কারে খুব শিগগিরই উদ্যোগ নেওয়া হবে।
টিআর/এম. জামান