• ঢাকা রবিবার
    ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

তিন শতাধিক চাতালে শুঁটকি তৈরির ধুম

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২১, ০৫:১৩ পিএম

তিন শতাধিক চাতালে শুঁটকি তৈরির ধুম

সিরাজুল ইসলাম শিশির, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

উত্তর জনপদের মৎস্য ভাণ্ডারখ্যাত স্থানসমূহের মধ্যে বৃহত্তর চলনবিল একটি। এ অঞ্চলের শুঁটকির চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। এছাড়া চলনবিলের শুঁটকি ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। তাই তো চলনবিল অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শুঁটকি তৈরির ধুম পড়েছে। এরই মধ্যে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর, নওগাঁর আত্রাইসহ চলনবিলের অন্তত তিন শতাধিক অস্থায়ী চাতাল নির্মাণ করে চলছে শুঁটকি মাছ তৈরির কাজ।

মাছ সংগ্রহ রোদে শুকানো, বাছাই ও প্রক্রিয়াজাতকরণসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন চাতাল মালিক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। এদিকে চাতালের সংখ্যা ও শুঁটকির উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক হাজার দুঃস্থ নারী শ্রমিকের।

মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) সরেজমিনে মহিষলুটি শুঁটকির চাতালে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন চাতালে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শত শত নারী-পুরুষ। প্রতিটি চাতালে ১৫-২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তবে এ কাজে নারী শ্রমিকরা বেশি দক্ষ বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এ কারণে চাতালগুলোতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি।


নারী শ্রমিক সাহিদা খাতুন ও জোসনা বেগমের সঙ্গে কথা হয় সিটি নিউজ ঢাকার। তারা জানান, সারা বছর তাদের বসে থেকে অবসর সময় কাটাতে হয়। কিন্তু বর্তমানে শুঁটকির চাতাল তৈরি হওয়াতে কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রতিদিন ২০০-৩০০ টাকা করে হাজিরা পান তারা। এভাবে তিন থেকে চার মাস কাজ থাকে  শুঁটকির চাতালে। ফলে এই সময়টাতে সাংসারিক অভাব কিছুটা হলেও দূর হয়। 

শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. নাসির উদ্দিন, তোফাজ্জাল ও আবু বক্কার সিদ্দিক জানান, দেশব্যাপী চলনবিলের মাছের শুঁটকির চাহিদা রয়েছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বিল এলাকায় বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এ বছর মাছের দামও কিছুটা কম। এ বছর বেশি পরিমাণ শুঁটকি উৎপাদন করতে পারব বলে আশা করছি।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, উত্তরের জেলা রংপুর, নীলফামারী, সৈয়দপুর,লালমনিরহাট ও ঢাকাসহ ২৫ জেলায় এখানকার শুঁটকি সরবরাহ হয়ে থাকে। চলনবিলভিত্তিক শুঁটকি বিক্রয় কেন্দ্র এবং স্টোরেজ সেন্টার না থাকায় শুঁটকি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে শুঁটকি। তাই সরকার যদি সংরক্ষণাগার ও কম সুদে লোনের ব্যবস্থা করে দিত তাহলে এ শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেত। 

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ বলেন, গত বারের চেয়ে চলনবিলে মাছের উৎপাদন বেড়েছে। এখানকার শুঁটকি প্রস্তুতে লবণ ছাড়া অন্য কোনো রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার না করায় চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। গত মৌসুমের চেয়ে এ বছর দ্বিগুণ পরিমাণ শুঁটকি উৎপাদন হবে। মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান এই মৎস্য কর্মকর্তা।

এ শিল্পের উন্নয়নে সংরক্ষণাগার নির্মাণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

টিআর/ডাকুয়া

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ