• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

পার্কিং টাইলসে স্বপ্ন বুনছেন শিমুল

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২১, ০৮:২০ পিএম

পার্কিং টাইলসে স্বপ্ন বুনছেন শিমুল

মঈনুদ্দীন তালুকদার হিমেল, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

লেখাপড়া শেষে চাকরির পেছনে না ছুটেও যে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মোস্তাফিজুর রহমান শিমুল। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে দেশে চাকরি না পেয়ে পাড়ি জমান বিদেশের মাটিতে। এক পর্যায়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নে দেশে গড়ে তোলেন ব্লক পার্কিং টাইলস কারখানা। সম্ভাবনাময় এই তরুণ উদ্যোক্তার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে। এবছরের প্রথম দিকে শহরের শান্তিনগর এলাকায় গড়ে তোলেন কারখানাটি।

ব্যবসা শুরুর আট মাসেই পাওয়া ব্যাপক সাফল্য হাসি ফুটিয়েছে শিমুলসহ আরও অনেকের মুখে। এখন আর চাকরির পেছনে ছোটেন না শিমুল। এখন চাকরি দিচ্ছেন তিনি। বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ হওয়াটা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। শিমুলের কারখানায় তৈরিকৃত টাইলস এখন নিজ জেলার গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

মোস্তাফিজুর রহমান শিমুল সিটি নিউজ ঢাকাকে জানান, ২০১১ সালে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে তিন বছর চাকরির পেছনে ছুটেও লাভ হয়নি তার। শিক্ষিত হয়েও বেকার থাকাটা নিজের কাছে নিজেকে বোঝা বলে মনে হচ্ছিল। হতাশা কাটিয়ে হয়ে ২০১৫ সালে প্রবাসে পাড়ি জমান তিনি। শিমুল কাতারের একটি পার্কিং টাইলসের কোম্পানিতে চাকরি করতেন। 

শিমুল বলেন, আমি সেই টাইলসের কোম্পানিতে প্রায় ৩ বছর কাজ করেছি। খেয়াল করি যে, কারখানায় তৈরিকৃত পার্কিং টাইলসে ব্যবহৃত প্রধান কাঁচামাল সিমেন্ট, বালু ও নুড়ি পাথর আমাদের দেশে তথা নিজ এলাকাতেই বেশ সহজলভ্য। ছোটো আকারে শুরু করতে পুঁজিও তেমন লাগছে না। তখনি দেশে ফিরে এমন একটি কারখানা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত স্থির করি।



২০১৯ সালে দেশে ফিরেই এই কারখানা দেওয়ার পরিবেশ যাচাই করতে থাকেন শিমুল। দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা পার্কিং টাইলসের কারখানা ঘুরে দেখেন। বাজারে চাহিদা বোঝার চেষ্টা করেন। এতে করে কাতারভিত্তিক প্রযুক্তি দেশের জন্যে সঠিক বলে মনে হয় তার।

শিমুল আরও বলেন, ২০২০ থেকে কারখানা দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দুই লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়ে ২০২১-এর ১ জানুয়ারিতে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদ শুরু করি পার্কিং টাইলস। নিজ জেলায় ব্যাপক সাড়া পাই। আস্তে আস্তে পার্শ্ববর্তী জেলায় যাওয়া শুরু করে আমার পণ্য। তবে এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অর্ডার পাচ্ছি।

পার্কিং টাইলসের কারখানায় কর্মরত শ্রমিক আজম আলী শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ায় তার আগের পেশা রিকশা চালাতে বেশ কষ্ট হতো। তবে তিনি জানান, এক বন্ধুর কাছে জানতে পেরে তিনি শিমুলের কারখানায় কাজ নিয়েছেন। ভালো পারিশ্রমিক পেয়ে তার মতো বাকিরাও বেশ খুশি।

প্রথমে একজন শ্রমিককে কাজ শিখিয়ে তাকে নিয়ে পথচলা শুরু শিমুলের। এখন এই কারখানায় ১৭ জন শ্রমিক কাজ করছেন। সরকারি সহযোগিতা পেলে এই কারখানাটি আরও বৃহৎ আকারে করলে ১৫০-২০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা।

শিমুলকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করে তার কাজে উৎসাহ দেওয়া উচিত বলে জানান ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মামুনুর রশিদ। তিনি জানান, শিমুলের মাধ্যমে বৃহত্তম কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে। তার সফলতা অন্যান্য তরুণদের উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করবে। 

ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, আমরা চাই ভালো ভালো উদ্যোক্তা সৃষ্টি হোক। শিমুলের উদ্যোগ বেশ সম্ভাবনাময়। তার যে কোনো সহযোগিতায় আমরা পাশে আছি।

টিআর/ডাকুয়া

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ