প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২১, ১১:২০ এএম
দুয়ারে কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সোমবার (১১ অক্টোবর) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গোৎসব। এ জন্য মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে দুর্গাপূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। নিপুণ হাতে তৈরি দুর্গা, গণেশ ও কার্তিকসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর সাজসজ্জায় দম ফেলার ফুরসত নেই প্রতিমাশিল্পীদের। এ বছর সাতক্ষীরা জেলায় ৫৮১টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা। তবে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবারের দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানায় জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ।
ভক্তরা জানান, এবার দেবী দুর্গা আসবেন ঘোড়ায় চড়ে, আর ফিরবেনও ঘোড়ায়। ঢাক, ঢোল, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনি দিয়ে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তারা। প্রতিটি পূজামণ্ডপে প্রতিমা বানানোর কাজ শেষ। নিখুঁতভাবে মনের মাধুরী মিশিয়ে তারা প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। আর এক একটি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরিতে কারিগররা মজুরি নিচ্ছেন ৬০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। একই সঙ্গে পূজার পুরোহিত নির্বাচনের কাজও শেষ করছে মণ্ডপ পরিচালনা কমিটি।
শরতের শিশির ভেঁজা কাশফুলই শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমনী বার্তা দেয়। ৬ অক্টোবর শুভ মহালয়ার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব। দুর্গোৎসব ঘিরে নানা আয়োজনে ব্যস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সব ধর্ম ও শ্রেণির বাঙালির মধ্যেও। পূজার আনন্দে মাতোয়ারা বাঙালি জাতি।
১১ অক্টোবর ষষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হবে। সাতক্ষীরা সদরসহ জেলার অধিকাংশ মন্দিরে চলছে তারই প্রস্তুতি। ভাস্কররা ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমার সৌন্দর্য বর্ধনে। ডেকোরেটর কর্মীদের ঘুম নেই। আয়োজকদের ফরমায়েশ আর ডিজাইন অনুযায়ী গড়ে তুলছেন পূজামণ্ডপ। চলছে সংস্কারের শেষ কাজটুকু।
সরেজমিন বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, দুর্গার বাহকসহ প্রতিমার শাড়ি ও অলঙ্কার পরানোর কাজও ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। আলোকসজ্জা ও রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হচ্ছে প্রতিটি মণ্ডপ। প্রতিমা দেখতে এখনই দর্শনার্থীরা মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
সাতক্ষীর জেলা মন্দির কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে তাদের সকল প্রস্তুতি শেষের দিকে। ৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে আলোচনা সভা শেষ হয়েছে। তবে এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে যে মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে তারা আন্তরিকভাবে কাজ করলে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। এ বছর উৎসবকে শান্তিপূর্ণভাবে করতে প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি মণ্ডপে নিজস্ব সেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরগুলোর তালিকা করে সেখানে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ দেলওয়ার হুসেন বলেন, ‘আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে আমরা সর্বদা সজাগ রয়েছি। সব সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে তাদের উৎসব পালন করতে পারে সে বিষয়ে সর্বপ্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।’
হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব হিসেবে দুর্গোৎসব বিবেচিত হলেও বর্তমানে তা বাঙালি উৎসবে পরিণত হয়েছে। ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী বা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব।
টিআর/এম. জামান