
প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২১, ০৩:১৪ পিএম
মো. আমিরুজ্জামান, নীলফামারী প্রতিনিধি
দেশে বহু ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব কৃষিপণ্যের মধ্যে একসময় তুঁত চাষ ছিল অন্যতম। তুঁত চাষে অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়া যায়। কারণ এই তুঁত গাছ থেকেই উৎপাদন হয় রেশমের গুটি। কাপড় বুননের জন্য সুতার বিকল্প নেই। সুন্দর ও আকর্ষণীয় কাপড় তৈরি করতে মোটা সুতার যথেষ্ট চাহিদাও রয়েছে দেশে।
আর অধিক হারে রেশম চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত মোটা সুতা দিয়ে কাপড় তৈরির ব্যবস্থা নেওয়া হলে অধিক আয়ও করা সম্ভব। তাই তো নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নারীদের ক্ষমতায়নে আত্মস্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে কাজ করছে বৃহত্তর রংপুর জেলার “দারিদ্র্য হ্রাসকরণ শীর্ষক প্রকল্প” বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড।
এ প্রকল্পের আওতায় দেওয়া হচ্ছে রেশমের গুটি উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। পাশাপাশি সরকারি রাস্তার ধারে তুঁত গাছ রোপণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে করে রেশম চাষ করে উপজেলার বিভিন্ন ব্লকে প্রায় শতাধিক হতদরিদ্র পরিবারের গ্রামীণ নারীর সচ্ছলতা এসেছে। বিনা খরচে অধিক লাভ হওয়ায় অন্য নারীরাও এগিয়ে আসছেন রেশম চাষে।
রেশম চাষ করে উপজেলার বিভিন্ন ব্লকে প্রায় শতাধিক হতদরিদ্র পরিবারের গ্রামীণ নারীর সচ্ছলতা এসেছে। বিনা খরচে অধিক লাভ হওয়ায় অন্য নারীরাও এগিয়ে আসছেন রেশম চাষে।
সৈয়দপুর রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্রের উদ্যোগে রেশম পোকা খাবারের জন্য পুটিমারী ইউপি’র কিশোরগঞ্জ- টেংগনমারী রাস্তার দু’ধারে সারিবদ্ধভাবে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তুঁত গাছ রোপণ করা হয়েছে। বাড়ি-বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে পলু ঘর। প্রতিটি বাড়িতে রেশম পোকা বিতরণ থেকে গুটি তৈরি পর্যন্ত সব কিছু তদারকি করছেন রেশম বোর্ড। পরে উৎপাদিত গুটির মানভেদে সরকারি মূল্যে ৩ থেকে ৪ শত টাকা কেজি দরে কিনে নিচ্ছেন তারা।
শ্রমের ওপর নির্ভরশীল সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত পুটিমারী কালিকাপুর ডাক্তারপাড়া গ্রামের মর্জিনা, শাপলা ও বড়ভিটা চেয়ারম্যান পাড়ার মাহমুদা বেগমের পরিবারে। পরে রেশম বোর্ডের উদ্বুদ্ধকরণে কয়েক বছর আগে সরকারি প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন এর চাষাবাদ। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আসে।
মর্জিনা বেগম ও শাপলা আখতার জানান, সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। পরে রেশম বোর্ডের উদ্বুদ্ধকরণে কয়েক বছর আগে সরকারি প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন এর চাষাবাদ। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সংসারে ফিরে আসে সচ্ছলতা। তাদের মতো বাকি পরিবারগুলোও বছরে ৪ বার রেশমের গুটি উৎপাদন করে কম-বেশি লক্ষাধিক টাকার মতো সংসারে জোগান দিচ্ছেন।
বড়ভিটা চেয়ারম্যান পাড়ার মাহমুদা বেগম জানান, রেশমের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষাবাদ শুরু করে আজ অনেক ভালো আছি। সংসারে অভাব-অনটন নাই। বিনা খরচে রেশম চাষাবাদ করে মানভেদে উৎপাদিত গুটির সরকারি মূল্যে তিনশ থেকে চারশ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
সৈয়দপুর রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্রের ম্যানেজার রেজাউল করিম জানান, দরিদ্রতা হ্রাসকরণে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সড়ক, পুকুর পাড়, পরিত্যক্ত জায়গায় রেশম চাষ করে গ্রামের নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। কিশোরগঞ্জের ন্যায় বৃহত্তর রংপুরের ৮টি জেলায় এর চাষাবাদ দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে।
টিআর/ডাকুয়া