
প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২১, ০৪:৪৫ পিএম
সিরাজুল ইসলাম শিশির, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে
১৪ ছাত্রের চুল কাটার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। কয়েকজন
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে সাংস্কৃতিক
ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের দ্বারা নির্যাতন ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। অনেক
সময় অনেক কিছু সহ্য করেছেন। কখনও কোনো নালিশ বা অভিযোগ করেনি। কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের
চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা মনে সাড়া জাগিয়েছে। এক বন্ধু অত্যাচারের শিকার হয়ে ঘুমের ওষুধ
খেয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। ওই শিক্ষিকার আচরণে অনেক শিক্ষার্থী
মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র কেএম নাজমুল হাসান বলেন, তাদের সঙ্গে এ ঘটনা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বকে
তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে তিনি এমন কাজ কিভাবে করতে পারলেন
তা বলার ভাষা নেই। তাই এ শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার চাই। স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না হওয়া
পর্যন্ত এই আন্দোলন চলমান থাকবে। শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন কিছুটা শিথিল
করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক নির্যাতিত
ছাত্র শামীম হোসেন বলেন, ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নামের কলঙ্ক।
তিনি যদি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন, তাহলে আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
তাই যতক্ষণ পর্যন্ত তার স্থায়ী বহিষ্কার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান
থাকবে। আমরা এখন তদন্ত রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে আছি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবুল
জাফর হোসাইন বলেন, রোববার (৩ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও তদন্ত কমিটির কর্তৃপক্ষ
প্রশাসনিক ভবনে মোট ৫৭ জনের সাক্ষী এবং চুল কাটার বিষয়ে বর্ণনা নিয়েছেন। এ সময় ১৩
জন শিক্ষার্থী সরাসরি ও এক ছাত্র অসুস্থ থাকায় হাসপাতালে থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে
সাক্ষ্য দেন। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা হবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও রবীন্দ্র
অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, তদন্তের স্বার্থে
বিভাগের প্রত্যক্ষদর্শী আরও ১৫ শিক্ষার্থী, তিনজন শিক্ষক, পাঁচজন কর্মচারীর সাক্ষ্যগ্রহণ
করা হয়। এ সময় অন্য বিভাগের আরও পাঁচজন শিক্ষার্থীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। একই দিনে
শিক্ষার্থীদের অনুরোধের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানান সময়ে ওঠা নানান
অভিযোগের ব্যাপারে সেসব ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাক্ষ্য দেন বিভিন্ন বিভাগের আরও আটজন শিক্ষার্থী।
সব মিলে প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি সাক্ষ্য দেন।
তিনি আরও বলেন, গতকাল রোববার
দুপুর ১২টায় অভিযুক্ত শিক্ষক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা
ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে তদন্ত কমিটির কাছে তার বক্তব্য পেশ করার সময় দেওয়া হয়েছে।
তবুও তিনি মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে উপস্থিত হননি। তিনি একটি মেইল করে
আরও কয়েক দিন সময় দরকার বলে জানিয়েছেন।
কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন
জমা দেওয়া হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক উপস্থিত না হয়ে সময়ের জন্য
আবেদন করেছেন। সেক্ষেত্রে আমাদের বসে তাকে কতটুকু সময় দেওয়া যায় সেই সিদ্ধান্ত নিতে
হবে। তারপর সব কিছু মিলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভিসির অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রেজারার আব্দুল লতিফ সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, এ ঘটনার
সত্য উম্মোচনে রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সিনেট সদস্য লায়লা ফেরদৌস হিমেলকে
প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে
যাচ্ছেন। তাদের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সিনেট সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া
হবে।
তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত
শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেই সুপারিশ
করা হবে এই সিনেট সভা থেকে। সেই সুপারিশ অনুযায়ীই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টিআর/ডাকুয়া