প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২১, ১২:৪৯ পিএম
৭৫ বছর বয়সী দৃষ্টিহীন ও বাক-প্রতিবন্ধী ছবিজন বেওয়া। সহায়-সম্বলহীন এ বৃদ্ধা ভাইয়ের বাড়িতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটচ্ছেন। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জীবন-যাপন করা ছবিজনের ভাগ্যে মেলেনি কোনো সরকারি সহযোগিতা। স্বামী পরিত্যক্তা ও নিঃসন্তান ছবিজন বেওয়ার (৭৫) বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনিরাম গ্রামে। বয়স্ক ভাই ও ভাতিজা ছাড়া আর কেউ নেই তার।
সরেজমিনে জানা যায়, স্বাধীনতার আগে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া ছবিজন বেওয়ার বিয়ে হয়েছিল পাশের গ্রামের আব্দুল গফুরের সঙ্গে। বিয়ের ৬ মাসের মাথায় বৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে দৃষ্টিশক্তি হারান তিনি। অন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসা করতে না পারায় স্বামী আব্দুল গফুর ছবিজনকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেন। সেই থেকে রোগে-শোকে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, দরিদ্র বাবা সাধ্যমতো চিকিৎসা ও বিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করছিলেন। কিন্তু অন্ধ হওয়ার কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। বিয়ের ৬ মাসের মধ্যে অন্ধত্ব ও স্বামীহারা শোকে পাথর হয়ে যান ছবিজন বেওয়া। স্বজন প্রতিবেশী কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। ঠিক কয়েক বছর পরেই বাবাকে হারান। পাহাড়সম দুঃখ আর শোকে ছবিজন বেওয়া হারিয়ে ফেলেন বাক-শক্তিও।
এক পর্যায়ে দৃষ্টি ও বাক-শক্তিহীন ছবিজন বেওয়ার ঠাঁই হয় ছোট ভাই আসমত আলীর বাড়িতে। কিন্তু ভাইয়ের সংসারে ছিল অভাব-অনটনে ভরা। গরিব দিনমজুর ভাইয়ের বাড়িতে ৩৫ বছর ধরে থাকলেও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও বাক-শক্তিহীন ছবিজন বেওয়ার ভাগ্যে মেলেনি কোনো প্রতিবন্ধী ভাতা কিংবা বয়স্ক ভাতা। নিরুপায় হয়ে অসুস্থ শরীর নিয়ে জীবনের শেষবেলা দিন গুনছেন তিনি।
প্রতিবেশী সামাদ আলী জানান, একা উঠে দাঁড়াতে পারেন না ছবিজন বেওয়া। সারাদিন মাটিতে বসে কাটে তার। এই বৃদ্ধ বয়সে তিনি চোখে দেখেন না, কথাও বলতে পারেন না। সব সময় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। সরকার যদি একটা ভাতার ব্যবস্থা করত তাহলে ছবিজন বেওয়ার অন্তত খাবারের কষ্টটা হত না।
ছবিজন বেওয়ার ভাই আসমত আলী সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, হামরা (আমরা) গরিব মানুষ, অভাবী সংসার। বোনোক (বোনকে) তো আর ফেলে দিবের পাই না। কত চেষ্টা করলোং (করলাম) এ্যাহান (একটা) বয়স্ক ভাতা কার্ড কইরবার (করার জন্য), হইল না। জানি না আর কত বয়স হলে ছবিজন বেওয়ার কপালে জুটবে বয়স্ক ভাতা।
ছবিজনের ভাতিজা ফজলু জানান, তার ৭৫ বছর বয়সের অন্ধ ফুফু কোনো সরকারি সাহায্য পান না। কারণ তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) নেই।
ফজলুর দাবি, ফুফুর না হয় আইডি কার্ড নেই, আমার বাবা আসমত আলীর তো আইডি কার্ড আছে। তার বয়স ৭০ বছর। বাবা ও ফুফুর ভাতার জন্য চেয়ারম্যান-মেম্বরের পেছনে অনেক ঘুরেছি, ভাতা পাইনি। গরিব মানুষের কথা কেউ শোনে না।
এ বিষয়ে বড়ভিটা ইউপি চেয়ারম্যান খয়বর আলী মিয়া জানান, ছবিজন বেওয়ার ভাতার ব্যাপারে কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তারপরও খোঁজখবর নিয়ে তার ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।
টিআর/ডাকুয়া