ঝালকাঠি প্রতিনিধি
করোনা আক্রান্ত মায়ের অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যায়। এরপরেই পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মোটরসাইকেলে করে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় ব্যাংক কর্মকর্তা ছেলে জিয়াউল হাসান টিটু। যা ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
হাসপাতালে টানা ছয়দিন মায়ের সেবা করেন টিটু। এতেই সুস্থ হয় মা। তবে টিটু নিজেই করোনা আক্রান্ত হন। অবশেষে টানা ১৫ দিন করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার তিনি নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা দিয়েছিলেন। রোববার (৯ মে) দুপুরে তার মোবাইলে করোনা নেগেটিভের বার্তা আসে।
জিয়াউল হাসান টিটু বলেন, 'আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। করোনা পজিটিভ থাকাকালে আমার শরীরে কোনো উপসর্গ ছিল না। তারপরেও টানা ১৫ দিন আমি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সব কাজ করেছি। এজন্যই আমি দ্রুত সুস্থ হয়ে গেছি।'
ওই ব্যাংক কর্মকর্তা আরও বলেন, 'আমি সুস্থ হওয়ার পেছনে আমার মা রেহেনা বেগম ও ছোট ভাই রাকিবুল হাসান ইভানের ভূমিকা অপরিসীম। তাদের সেবাযত্নেই আমি এখন সম্পূর্ণ করোনা মুক্ত। মায়ের সেবা করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছি। এতে আমার কোনো দুঃখ নেই। মমতাময়ী মাকে বাঁচাতে হবে, এটাই ছিল আমার একমাত্র চাওয়া।'
এই ১৫ দিন কীভাবে কাটল, এমন প্রশ্নে টিটু জানান, বই পড়ে ও ইন্টারনেট ব্যবহার করেই তার সময় কাটে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার কক্ষে খাবার দিয়ে আসতেন সেই মমতাময়ী মা ও ছোট ভাই। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলেই ইভান হাজির হয়ে যেত টিটুর কাছে। মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ও শরীরে পিপিই পড়ে ভাইয়ের সার্বক্ষণিক সেবা করেছে সে। মা ও ভাইয়ের প্রতি আজন্ম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন টিটু।
টিটুর মা রেহেনা বেগম জানান, তার সেবা করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে টানা ১৫ দিন ঘরের ভেতরে ছিল টিটু। এরপর ছেলের সার্বক্ষণিক সেবাযত্ন করেছেন নলছিটি বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রেহেনা পারভীন। টিটুর বাবা মরহুম আব্দুল হাকিম মোল্লা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাবার মৃত্যুর পরে ছেলেরাই মায়ের দেখাশোনা করেন। স্বামীকে হারানোর অভাব কখনোই বুঝতে দেননি তার তিন ছেলে।
এএএম/এএমকে
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন