• ঢাকা বুধবার
    ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

`আমার বুকের মানিককে যে কেড়ে নিছে তার শাস্তি চাই'

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১, ১১:১১ এএম

`আমার বুকের মানিককে যে কেড়ে নিছে তার শাস্তি চাই'

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

`আমার বুকের মানিককে তোমরা ফিরেয়ে দাও। তোমরা নীল পোশাক পরে আসছো, আমার বাবাকে সাদা পোশাকে রেখে আসলে ক্যান?' নিহত পেয়ারুল ইসলামের মায়ের এমন কান্নার আহাজারিতে শুধু বিদ্যানন্দের আকাশ ভারী হয়নি, ভারী হয়েছে গোটা বাংলাদেশ।

দাদির কোলে নিষ্পলক চেয়ে থাকা শিশু আবরার হাসানের চোখের জল বুঝিয়ে দিয়েছে বাবা মানে কি? তাই তো মনে পড়ে-

যার চলে যায় সেই বোঝে যে হায়

হারানোর কি যন্ত্রণা

অবুঝ শিশুর অবুঝ প্রশ্ন,

কি দিয়ে দেবে তাকে সান্ত্বনা।

রংপুর হারাগাছ থানার সাহেবগঞ্জ এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে এক মাদক কারবারির ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন এএসআই পেয়ারুল ইসলাম। পরে তাৎক্ষণিক তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়। নিহত পেয়ারুল ইসলামের মরদেহ কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চন্দ্রাপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে নিয়ে এলে পুরো এলাকাজুড়ে শুরু হয় শোকের মাতম।

এএসআই পেয়ারুল ইসলাম চন্দ্রাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান মিন্টুর বড় ছেলে। তার দুই ছেলে সন্তান স্ত্রী রয়েছে। বড় ছেলে আসিফ পারভেজের বয়স বছর এবং ছোট ছেলে আবরার হাসানের বয়ম মাত্র বছর। এই দুই অবুঝ সন্তানকে নিয়ে শোকের সাগরে ভাসছেন স্ত্রী উম্মে হাবীবা (২৫)


স্বামীর শোকে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। বারবার মূর্ছা যাওয়া উম্মে হাবীবার স্বজনরা তাকে ঘিরে বসে চোখের পানি ফেলছেন। নিথর হয়ে শুয়ে থাকা উম্মে হাবীবার ওপর আজ পাহাড়সম দুঃখ। প্রিয়জন হারানো বেদনার কত ভার, যে হারায় সেই বুঝে। বাবা-মা ভাইবোন আত্মীয়-স্বজন সহকর্মী এলাকাবাসী সবারই চোখে পানি। চন্দ্রাপাড়া যেন এক বিষাদের উপত্যকায় পরিণত হয়েছে।

এই তো সেদিন ছুটিতে এসে এএসআই পেয়ারুল সবাইকে গান-গল্পে মাতিয়েছিলেন। আজ বাড়ি মাতাতে নয়- পেয়ারুল এসেছে লাশ হয়ে, শোকের মাতম হয়ে। এই শোক, এই কান্না, এই আহাজারি -চন্দ্রাবাসী কেউ চায়নি। সাহসী এক যুবক, হার না মানা পেয়ারুল ইসলাম এত অল্প সময়ে চলে যাবে এমনটা কেউ ভাবেননি।

পেয়ারুল ইসলামের মা বলেন, ‘আমার অবুঝ নাতি দুটো আজ এতিম হলো। আমার বুকের মানিককে যে কেড়ে নিছে তার উপযুক্ত বিচার চাই, শাস্তি চাই।

বাবা আব্দুর রহমান মিন্টু বলেন, ‘আমার বলার কিছু নাই। আমার ছেলের জন্য সবাই দোয়া করবেন সে যেন বেহেস্তবাসী হয়। আর সরকারের কাছে আকুল আবেদন আমার পরিবারে দিকে যেন একটু সদয় হন। বড় ছেলে তো চলে গেল। ছোট ছেলেটা পড়াশোনা জানা আছে তার জন্য যেন পুলিশের যে কোনো পদে একটা চাকরির ব্যবস্থা হয়।


প্রতিবেশী মো. সুমন বলেন, পেয়ারুলকে ছোটকাল থেকে দেখে এসেছি খুব সাহসী, ভদ্র মেধাবী একজন ছেলে। তার দেশের জন্য জীবন দেওয়া কুড়িগ্রামবাসীর জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে। আমরা দোয়া করি আল্লাহপাক তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।

বিদ্যানন্দ ইউপি চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম সরকার বলেন, এর আগেও আসামি ধরতে গিয়ে এরকম ঘটনার কথা শুনেছি। সে ঘটনায় তার কিডনিতে নাকি সমস্যা হয়েছিল। সাহসী বলেই তো অন্যায়ের সাথে আপস করে নাই। আমরা তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।

রংপুর মেট্রোপলিটন সদর সার্কেল এএসপি মো. আলতাবুর রহমান বলেন, পেয়ারুল অত্যন্ত ভালো মানুষ মেধাবী সহকর্মী ছিলেন। আমরা আমাদের প্রিয় সহকর্মীকে হারালাম। দুইভাবে পেয়ারুল ইসলামকে আমরা  মনে রাখতে চাই- তার কৃতির জন্য বীর হিসেবে এবং দুষ্কৃতকারীর নামে মামলাগুলোর সঠিক তদন্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তির মাধ্যমে। যাতে নিহত পেয়ারুল ইসলামের আত্মা শান্তি পান এবং পরিবার-পরিজন যেন উপযুক্ত বিচার দেখতে পায়।

এস/ডাকুয়া

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ