প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১, ০৬:২১ পিএম
জুয়েল রানা, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
‘জন্মের
পর যখন বুঝতে শিখি,
তারপরই এই প্রতিমার
সঙ্গে আমার জীবন চলা
শুরু। ছোট সময় থেকে
হাতেখড়ি বাবার হাতে, নিখুঁতভাবে মনের মাধুরী মিশিয়ে
বাবা তৈরি করেন এই
প্রতিমা। বাবা যখন আমাকে
প্রতিমা বানানো শিখাতেন তখন একদম অন্য
কিছুর প্রতি মন দিতে পারতাম
না। বাবার কথা মনোযোগ দিয়ে
শুনতাম ও বাবার কাজগুলো
দেখতাম। তাই নিজেও এরকম
এখন বানাতে পারি।’ কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাশড়া
গ্রামের ভারত পাল।
ভারত
পালের হাতের কারুকাজ যেন মুগ্ধতা সৃষ্টি
করে। প্রতিমা তৈরি যেন মিশে
আছে তার মনে-প্রাণে।
শিল্পীর ছোঁয়ায় তৈরি করছেন দুর্গা
দেবীকে। ছোট সময় থেকেই
প্রতিমা তৈরি তার ধ্যানজ্ঞান। বয়স যখন ১০
বছর তখন থেকে বাবার
সঙ্গে হাতেখড়ি হয় প্রতিমা তৈরির।
মনকে উজাড় করে দিয়ে
তৈরি করেন প্রতিমা। তার
হাতের কারুকাজ প্রতিমা তৈরিতেই ফুটে আসে। ৫০
বছর ধরে জেলার বিভিন্ন
এলাকায় তৈরি করছেন প্রতিমা।
আর
ক’দিন বাদেই আসছেন দেবী দুর্গা। তাই
শিল্পীর নিপুণ হাতে চলছে প্রতিমা
তৈরির কাজ। নিখুঁতভাবে মনের
মাধুরী মিশিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা দেবীকে। পাশাপাশি চলছে লক্ষ্মী, সরস্বতী,
গণেশ ও কার্তিকের প্রতিমা
তৈরির কাজ। প্রতিমা তৈরিতে
ব্যস্ত সময় পার করছেন
তিনি।
১১
অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু
হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয়
দুর্গোৎসব।
সরেজমিনে
দেখা যায়, প্রতিমা তৈরিতে
ব্যস্ত সময় পার করছেন
ভারত পাল। দেড় মাস
আগে থেকেই শুরু করেছেন প্রতিমা
তৈরির কাজ। রাত-দিন
পরিশ্রম করে নিপুণ হাতে
তৈরি করছেন দেবী দুর্গাকে। ব্যস্ত
হয়ে পড়েছেন প্রতিমা তৈরিতে; যেন দম ফেলার
ফুরসত নেই তার।
ভারত
পাল জানান, ‘ছোট সময় থেকে
বাবার কাছে প্রতিমা তৈরির
কাজ শিখি। প্রতিমা তৈরি আমার আত্মার
সঙ্গে মিশে আছে। আমার
বয়স যখন ১০ বছর
তখন থেকেই প্রতিমা তৈরির কাজে লেগে পড়ি।
মনের আবেগ আর ভালোবাসা
দিয়েই প্রতিমা তৈরি করি। প্রতিমা
তৈরিই আমার ধ্যানজ্ঞান।
প্রতিমা তৈরি কাজে নিয়োজিত
রয়েছি প্রায় ৫০ বছর ধরে।
বলা চলে ৫০ বছর
এই প্রতিমার সঙ্গে কেটে গেছে জীবন।
এ বছর প্রায় ১৪টি
প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। কোনো
মণ্ডপে চলছে কাঠামোর কাজ
আর কোনো মণ্ডপে চলছে
মাটির কাজ। আমার ছোট
দুই ভাইও প্রতিমা তৈরির
কাজের সঙ্গে জড়িত।’
উপজেলার
রাশড়া গ্রামের যাদব পাল জানান,
‘ভারত ছোট সময় থেকে
প্রতিমার তৈরির কাজ করছে। প্রায়
৫০ বছর ধরে প্রতিমা
তৈরি করছে। বাসাইল ছাড়াও পার্শ্ববর্তী উপজেলা সখিপুরে প্রতিমা তৈরিতে ভারতের সুনাম রয়েছে। শোনেছি এ বছর ১৪টি
প্রতিমার তৈরির কাজ করতেছে।’
জিকাতলী
পাড়া গ্রামের শীতল চক্রবর্তী জানান,
‘ছোট সময় থেকে দেখছি
কাকা (ভারত পাল) প্রতিমা
তৈরি করছে। আমি মাঝে মাঝে
কাকার প্রতিমা তৈরি দেখতে যেতাম।
যতই দেখতাম মুগ্ধ হতাম।’
বাসাইল
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের
সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ সুনীল রায় স্বপন বলেন,
‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ার
কারণে আমরা বড় দুশ্চিন্তায়
ছিলাম। ঈশ্বরের কৃপায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমায়
পূজার আয়োজন ও প্রতিমা তৈরির
কাজ চলছে। প্রতিমা শিল্পীরা ব্যস্ত হয়ে তৈরি করছেন
প্রতিমা। রাত-দিন প্রতিমার
কারিগররা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। গত
বছর ৪২টি মণ্ডপে পূজা
অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর
প্রায় ৫৬টি মণ্ডপে পূজা
উদযাপন করা হবে। সরকারি
নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা মণ্ডপগুলোতে
শারদীয় দূর্গা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।’
শারদীয়
দুর্গা উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের
জন্য উপজেলা প্রশাসন ও বাসাইল থানা
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
নূর/এম. জামান