প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১, ১২:৩৪ পিএম
কালের
বিবর্তনে হারিয়ে যায় সমাজের হালচাল। পরিবর্তন হয় মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা-চেতনার।
আজ জমিদার প্রথা নেই, নেই পাইক-পেয়াদাও। মুন্সেফ কিংবা মুন্সীয়ানাদের সময়ও শেষ। তবে
সেই সময়ে গড়েওঠা প্রতিষ্ঠানগুলো; প্রাচীন স্থাপত্যকলার সাক্ষী হয়ে জানান দেয় অনেক
কিছুই।
তেমনি
সাক্ষ্য দিচ্ছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরনিবাড়ী ইউনিয়নে অবস্থিত ৪০০ বছরের পুরনো
একটি বাড়ি। অনেকে জমিদার বাড়ি বললেও তৎকালীন সময়ে মুন্সেফ বা মুন্সী পদধারী ব্রজেন্দ্র
লাল মুন্সীর তত্ত্বাবধানে চমৎকার স্থাপত্যে এই বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। যার কারণে এটি
মুন্সীবাড়ি হিসাবে পরিচিত। ব্রজেন্দ্র লাল মুন্সী জমিদার কৃষ্ণ নন্দীর হিসাব রক্ষক
বিনোদী লাল মুন্সীর পালকপুত্র ছিলেন।
আঠারো শতকে নির্মিত উলিপুর মুন্সীবাড়ি ৩৯ একর জায়গার উপর অবস্থিত। এর বিশাল অট্টালিকাগুলো আজো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দ্বিতলা বিশিষ্ট মূল ভবনে আছে শয়ন কক্ষ, ডাইনিং রুম, রান্নাঘর, অঙ্কন কক্ষ, বিশ্রাম ঘর এবং অতিথিশালা। মূল বাড়ির পেছনের দিকে শিবমন্দির, উন্মুক্ত দোলমঞ্চ, তুলসি বেদী, নাটমন্দির, দুর্গামন্দির ও কূপসহ স্নানাগার। এছাড়া মূল ফটকের পাশে আছে কাঁঠালি চাঁপা ফুলের গাছ এবং শান বাঁধানো পুকুরঘাট।
ইতিহাস
থেকে জানা যায়, তৎকালীন কাশিমবাজার এস্টেটের ৭ম জমিদার ছিলেন কৃষ্ণনাথ নন্দী ও স্ত্রী
মহারানী স্বর্ণময়ী। বাড়ির দেখাশোনা ও দফতরিক কাজ করতেন ব্রজেন্দ্র লাল মুন্সীর বাবা
বিনোদী লাল মুন্সী। বিনোদী লাল মুন্সী সে সময় ১০০ টাকা দিয়ে ধরনিবাড়ী এস্টেটের জোতদারি
ভোগ করতেন। জমিদার কৃষ্ণনাথ নন্দী কোনো এক ঘটনায় মামলার ফাঁদে পড়েন। নিজের আত্মসম্মান
চলে যাওয়ার ভয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর আগে ১৮৪৪ সালে ৩১ অক্টোবর নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা
করেন।
তার হঠাৎ চলে যাওয়ায় স্ত্রী মহারানী স্বর্ণময়ী মুন্সেফ বিনোদী লাল মুন্সীকে জমিদারি দেখাশোনা ও হিসাব রক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে বিনোদী লাল মহারানী স্বর্ণময়ীর খুবই আস্থাভাজন হন।
কথিত
আছে, আগের মানুষ কুসংস্কারকে খুবই প্রাধান্য দিতেন। কোনো একদিন বিনোদী লাল মুন্সী হাতির
পিঠে চড়ে শিকার করতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখেন একটি ব্যাঙ সাপকে ধরে খাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে
বিনোদী লাল হতবাক হন। আগের মানুষের ধারণা ছিল ব্যাঙ সাপকে যে স্থানে ধরে খায়, সেই স্থানে
বাড়ি করলে অনেক সম্পদের মালিক হওয়া যায়।
এই
ধারণা থেকে বিনোদী লাল মুন্সী জমিদার স্ত্রী স্বর্ণময়ীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এই বাড়িটির নির্মাণকাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে বাড়িটির চমৎকার স্থাপত্য বিনোদী লাল মুন্সীর পালকপুত্র ব্রজেন্দ্র লাল মুন্সী শেষ করেন।
ব্রজেন্দ্র
লাল মুন্সীর কোনো সন্তান ছিল না। ১৯৬০ সালে ব্রজেন্দ্র লাল মুন্সী মারা যাওয়ার পর স্ত্রী
আশালতার বিহারি লাল নামে এক পালকপুত্র ছিল। কিন্তু বিহারি লাল নির্লোভ, ভবঘুরে ও মাতাল
থাকার কারণে এই মুন্সী বাড়ি ও ধরনি এস্টেট ধরে রাখতে পারেন নাই। বর্তমানে মুন্সী বাড়িটি
পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।
যেভাবে
যাওয়া যায় : উলিপুর উপজেলার ০ পয়েন্ট থেকে উলিপর এমএস স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশ দিয়ে ৫ কিলোমিটার পূর্ব দিকে পাকা রাস্তা। উলিপুর থেকে সাইকেল, মটরসাইকেল ,জিপগাড়ি থেকে
যে কোনো ধরনের যানবাহনে যাওয়া যায়।
টিআর/ডাকুয়া