প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১, ০১:৫৩ এএম
ঠাকুরগাও পীরগঞ্জে আশংকাজনক হারে বেড়েছে চুরির ঘটনা। ছোট খাট চুরির পাশাপাশি
বেড়েছে গরু চুরি। প্রায় প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি পৌর শহর সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হলেও ঠেকানো যাচ্ছে না চোরদের উপদ্রব।
দুইদিন আগে উপজেলার পৌর শহরের গুয়াগাঁও এলাকার আরেফিন নামে এক ব্যক্তির বাড়ির
প্রাচীর ভেঙ্গে প্রবেশ করে চোরেরা। পরে গলায় পরানো লোহার শিকল কেটে তিনটি বিদেশী গাভী
চুরি করে নিয়ে যায় তারা। একই রাতে উপজেলার
সাগুনি গ্রামের মজাহারুলের বাড়ি থেকেও
চুরি হয় দুটি আড়িয়া গরু।
উপজেলার বোর্ডহাট, নোহানী, পটুয়াপাড়া, চন্ডিপুর, বেগুনগা, নাকাটিসহ বিভিন্ন এলাকায়
এসব চুরির ঘটনা ঘটেছে। গরু চুরি রোধে প্রশাসনের কোন তৎপরতাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
গরু ছাড়াও মোটর সাইকেল, মোবাইল ফোন, পানির পাম্প, বাই সাইকেল, টিউবওয়েল, রিক্সা ভ্যান
সহ স্বর্নালংকার চুরির ঘটনার পাশাপাশি টাকা ছিনতাইয়ে মত স্পর্শকাতর ঘটনাও ঘটছে এলাকাগুলোতে।
সম্প্রতি পৌর শহরের কলেজ বাজার থেকে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কিবরিয়া আবেদিনের
প্রায় তিন লাখ, মুদি দোকানদার ছুটুর প্রায় দুই লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ২ বস্তা
ধান ও ১২ বস্তা ভুট্টা চুরি হয়েছে উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সুমন
মন্ডলের শান্তিবাগ বাসা থেকে। কয়েক দিনের মধ্যে উপজেলা পরিষদ থেকে ১২৫ সিসি ডিসকোভার
একটি, আলহাসানা স্কুলের শিক্ষকের গুয়াগাও বাড়ি থেকে একটি পালসার, হাসপাতাল থেকে এক
ডাক্তারের একটি ডিসকোভার, মশালডাঙ্গী থেকে একটি ডিসকোভার, কলেজ বাজার থেকে এক নেতার
একটি ডিসকোভার মোটর সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। টাকা দিতে অস্বীকার করায় উপজেলার জাবরহাট
এলাকায় ছিনতাইকারীরা জবাই করে হত্যা করে বিকাশ ব্যবসায়ী ইসাহাক আলীকে। হত্যার ঘটনায়
পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করলেও গরু চুরি সহ অন্যান্য চুরি বা ছিনতাইয়ে ঘটনায় কেউ গ্রেফতার
হয়নি। এ নিয়ে পুলিশের কোন মাথা ব্যাথা নেই।
অভিযোগ রয়েছে, চুরির ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিতে গেলে, চোরের নাম চাওয়া হয় অভিযোগকারীর
কাছে। বলা হয়, চুরি যাওয়া মালামাল কোথায় আছে, খবর নেয়, জানতে পারলে আমাদের (পুলিশকে)
জানান, আমরা উদ্ধার করে দিবো। এজন্য পুলিশের কাছে যায় না সাধারণ ভুক্তভোগীরা।
মোটরসাইকেল চুরি যাওয়া ভুক্তভোগী আওয়ামীলীগ নেতা গোলাম রব্বানী অভিযোগ করে বলেন,
’পুলিশ চুরি যাওয়া মোটরসাইকের কোন খোঁজ দিতে না পারলেও একটি চক্র টাকার বিনিময়ে ফিরিয়ে
দিচ্ছে চোরাই মোটর সাইকেল। এ ক্ষেত্রে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা গুনতে হয় মোটর সাইকেল
মালিককে। চক্রটির বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দেওয়ার পরও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। চক্রটির
অন্তরালে কোন প্রভাবশালীর হাত রয়েছে। এজন্য
পার পেয়ে যাচ্ছে তারা। আমাদের ধারণা বিশেষ সুবিধা নিয়ে সব কিছু জানার পরও নিশ্চুপ থাকছেন
পুলিশ।’
নোহালী গ্রামের মহেন্দ্র নাথ ঠাকুর এবং তানিয়া আক্তার নামে উপজেলার আরেক ভুক্তভোগী
বলেন, ’সম্প্রতি তানিয়াদের বাড়ি থেকে পাঁচটি ও মহেন্দ্রের বাড়ি থেকে একটি গরু চুরি
হয়েছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কোন হদিস মিলেনি। পুলিশও কিছু করছে না।’
দবিরুল ইসলাম নামে এক শ্রমিক নেতা বলেন, ’শহরের বিভিন্ন এলাকায় সিসি ক্যামেরা
বসানো হয়েছে। এতে কোন কাজ হচ্ছে না। এর মাধ্যমে এখনো কাউকে সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।’
চুরির ঘটনায় পুলিশের নিশ্চুপ থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে পীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জের
দায়িত্বে থাকা ওসি (তদন্ত) খায়রুল আলম বলেন, ’কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। যারা অভিযোগ
করেছেন তাদের বিষয়গুলি দেখা হচ্ছে। চুরি রোধে তারা সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
তাছাড়া থানার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
আমিনুর/ইফাত