• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন ইতালির নাগরিক ফাদার কার্লো বুজি পিমে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১, ০৫:২১ পিএম

শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন ইতালির নাগরিক ফাদার কার্লো বুজি পিমে

সিরাজুল ইসলাম শিশির, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

ইতালির নাগরিক ফাদার কার্লো বুজি পিমে। তবুও বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। শিশু, নারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য গড়ে তুলেছেন অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চিকিৎসাকেন্দ্র। এমন জনদরদি মানুষকে কাছে পেয়ে অনেক খুশি স্থানীয়রা।

জন্ম ইতালিতে হলেও ৭৮ বছর বয়সী এই ফাদার হৃদয়ে ধারণ করেন বাংলাদেশকে। এদেশের মানুষকে ভালোবেসে তিনি জীবনের বাকি সময়টুকু দেশেই কাটিয়ে দিতে চান। এখন দেশের মানুষই তার কাছে প্রিয়। মৃত্যুর পর তার সমাধিটাও তিনি এদেশে চান।

জানা যায়, কার্লো বুজি পিমে ১৯৪৩ সালের এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেছেন ইতালির মিলানের কাছাকাছি শহর ভার্সির গুরলা মিনারে। বাবা গাইতান পোস্ট অফিসে চাকরি করতেন আর মা আনা ছিলেন গৃহিণী। নয় ভাই-বোনের মধ্যে কার্লো সবার ছোট। লেখাপড়া করেছেন মিলানে। তিনি বর্তমানে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার গুল্টা মিশনের পাল পুরোহিত।

মানুষকে সেবা করার মানসিকতা নিয়েই বেড়ে উঠেছেন কার্লো। সেবাই তার ধর্ম এবং মানবকল্যাণে জীবন উৎসর্গ করাই যেন তার লক্ষ্য। তাই তো সাহিত্যে পিএইচডি করা কার্লো হয়েছেন পুরোহিত। বিলাসী জীবনযাপন ছেড়ে ৪৫ বছর ধরে পড়ে আছেন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা এনে অবহেলিত, হতদরিদ্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন। শিশু বয়স্ক নারী-পুরুষের জন্য গড়ে তুলেছেন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

প্রশিক্ষিত সেবিকাদের দিয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন এলাকার গর্ভবতী নারীদের। সেবা দিচ্ছেন গরিব নারী শিশুদের। আইনি লড়াই করেছেন কৃষকদের জমি আদায়ে। মানুষকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। ফাদার কার্লো বুজি বাংলাদেশকে ভালোবেসে বাংলাভাষা রপ্ত করেছেন। যাতে করে মানুষের খুব কাছ থেকে তাদের মনের কথা শুনতে পারেন, বুঝতে পারেন।

কার্লো বুজি পিমে সিটি নিউজকে জানান, দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭৫ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে এসেছেন তিনি, যখন বাংলাদেশের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তিনি এদেশের সরকার বা ইতালির সরকার কারো কাছ থেকেই টাকা নেননি। এমনকি কোনো এনজিও থেকে টাকা নেননি। তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া প্রতিবেশীরা সেখান থেকে চাঁদা তুলে তাকে পাঠায়। আর সেই টাকা দিয়েই সেবা করা শুরু করেন। তিনি এদেশে গরিবদের জন্য কাজ করেন। তার স্ত্রী-সন্তান নেই। যেসব অসহায় ছেলে-মেয়ের জন্য কাজ করেন তারাই তার সন্তান।

ফাদার কার্লো মনে করেন ৪৫ বছর আগের বাংলাদেশ এখন আর নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব পাল্টে গেছে। এখন এই দেশ অনেক উন্নত। সব আছে এই দেশে। মাঝে-মধ্যে মনে হয় ইতালির চেয়ে বেশি কিছু আছে এখানে। 

তিনি আরও বলেন, আমি যদি এদেশে মরতে পারি আর এখানেই যদি আমার সমাধি হয় তবে আমি গর্বিত হব। কারণ একজন সৈনিকের যুদ্ধ ক্ষেত্রে মরাটা গৌরবের। আমি এই দেশে আছি, এই দেশে থাকব, এখানেই মরব।

স্থানীয় উপকার ভোগীরা জানান, ফাদার কার্লো একজন সাদা মনের মানুষ। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আদিবাসীদের প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি বেশি জোর দিয়েছেন। সারাদিন কাজকর্মের পর তাদের লেখাপড়া শেখার জন্য শিশুদের অনেক স্কুল চালু করেছেন। বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য নাইট স্কুল বয়স্ক নারীদের জন্য দিবা স্কুল করেন। এসব স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী এসএসসি পর্যন্ত পাস করেছেন। ছাড়া খ্রিস্টান শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া প্রার্থনার জন্য  রাজশাহী নঁওগাসহ অনেক জেলায় আবাসিক ব্যবস্থা করেছেন। ইতিমধ্যেই অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, অনেকে চাকরিও করছেন।

কার্লো বুজি পিমে শিক্ষার্থীদের শিখিয়েছেন- লেখাপড়া মানুষকে সভ্যতা শেখায় না। সভ্যতা শেখা যায় লেখাপড়ার পর কাজ করে এবং মানুষের সেবা করে।

টিআর/ডাকুয়া

 

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ