• ঢাকা বুধবার
    ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১

‘স্কুল খুললেও ক্লাস করতে পারছি না’

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১, ১০:০৫ পিএম

‘স্কুল খুললেও ক্লাস করতে পারছি না’

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

প্রায় দেড় বছর পর খুলেছে স্কুল। তাও ক্লাস করতে পারছি না। তাই খুব কষ্ট হচ্ছে। কত দিন ধরে স্কুলে যাই না বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হয় না। কী আর করার বন্যার পানি বাড়ির চার পাশে তাই বাড়িতেই থাকতে হবে। এমন আবেগ মাখা কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার আকুয়া গ্রামের আকুয়া চামুরিয়া দাখিল মাদরাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সুমি আক্তার। 

সুমি  আক্তার বলে, বন্যার শুরু থেকেই বাড়ির চার পাশে পানিবন্দী হয়ে পড়েছি। বাবা ছাড়া পরিবারে কেউ কামাই করে না, তাই নৌকা কিনার সামর্থ্যও নাই। সরকার এত দিন পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে তাও যেতে পারছি না। শুনেছি আমাদের মাদরাসায়ও নাকি পানি উঠেছে। এখন খুব খারাপ লাগছে যে, প্রায় দেড় বছর পর মাদরাসা খোলা কিন্তু যেতে পারছি না।

সুমি আক্তারের মতো বাসাইল উপজেলার হাবিবা নামে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রী বলেন, নৌকা করে স্কুলে যাচ্ছি, বাড়ির চারিপাশে পানি থৈ থৈ করছে। কিন্তু অনেক পর স্কুল খুলছে তাই স্কুলে না গিয়ে মনটা ভালো লাগবে না। তাই নৌকা নিয়েই স্কুলে যাচ্ছি।


সদর উপজেলার কাকুয়া গ্রামের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সেঁজুতি সাহা বলে, বাবা সকালে নৌকা দিয়ে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে গেছেন। আবার ক্লাস শেষ হলে নৌকা নিয়ে আসবে। না হলে সাঁতার কেটে বাড়ি যেতে হবে। রাস্তা ঘাট সব পানির মাঝে তলিয়ে গেছে।

ভুয়াপুর উপজেলার নবম শ্রেণির ছাত্রী রাশেদা নাসরীন বলেন, হাঁটুপানি মাড়িয়ে স্কুলে এসেছে। আবার যাবার সময় পানি পারিয়ে যেতে হবে। স্কুলে না আসলেও ভালো লাগে না। কি করার তাই পানির মধ্যেও স্কুলে আসছি। বাড়ির সবাই খুব চিন্তা করে কখন যানি পানিতে পরে যাই। সাঁতার জানি না তাই বাড়ির সবাই খুব চিন্তা করে। 

শামীম মিয়া নামে এক অভিভাবক বলেন, বন্যার পানি চার দিকে এমন অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে, বাচ্চাদের যে স্কুলে পাঠাব তা সাহস পাই না। কখন জানি পানিতে পরে যায়। স্কুল খোলায় সরকারকে ধন্যবাদ দেই। তবে আমাদের মতন যারা বন্যাকবলিত তাদের জন্য খুব কষ্ট হয়ে পড়েছে। 

টাঙ্গাইল আকুয়া চামুরিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার জলিল মিয়া বলেন, অনেক দিন পর আজ রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। তবে অনেক ছাত্র-ছাত্রী আসতে পারে নাই। কারণ অনেকের বাড়ির চার পাশে পানি। তাই যারা এখন আসতে পারছে না তাদের জন্য আলাদা ভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি। যাতে করে তারা পিছিয়ে না যায়। স্কুলে আসতে পারলে তাদের স্পেশাল ভাবে সময় দিয়ে বাকি পড়াগুলো আদায় করা হবে। 

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমায় দীর্ঘদিন পর আজ রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে সরকারি নির্দেশনায় সারা দেশের মতো টাঙ্গাইলের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয়েছে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে সশরীরে পাঠদান। প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মাস্ক পরাসহ শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন কঠোরভাবে নজরদারীতে রেখেছেন শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা।

জেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম জানান, বন্যাকবলিত কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বিরত রাখা হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলেই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু করা হবে।

টিআর/এম. জামান

আর্কাইভ