প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১, ০৭:৫০ এএম
ড্রেন
নির্মাণের জন্য দুটি গাছ কাটা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। এতে মারা
যায় অন্তত ৮০টি শামুকখোল পাখি। এ ঘটনায় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের
রাজশাহীর বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় অন্তত তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
শুক্রবার
(১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।
জাহাঙ্গীর
কবির বলেন, ’গত মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে
এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলা করা হয়। তবে
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিষেধ থাকায় বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি।’
তিনি
বলেন, ’বন্যপাখি হত্যা, মাংস, দেহের অংশ সংগ্রহ করা, শিকার ও এ জাতীয় অপরাধ সংগঠনের
সহায়তা করা, প্ররোচণা প্রদান ইত্যাদি বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২) অনুযায়ী
শাস্তিযোগ্য অপরাধ। রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাখির বাসস্থান ধ্বংস ও পাখিছানা হত্যা
করে প্রচলিত ওই আইন অনুসারে অপরাধ করেছে। পাশাপাশি অন্যদেরকে এ অপরাধ করতে উৎসাহিত
করেছে।’
তিনি
আরো বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি ওই আইনের ৬, ৩৮ (১), (২) ও ৪১ লঙ্ঘন করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ
করেছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে মামলা করা হয়েছে। আদালত
মামলাটি গ্রহণ করলেও কোনো আদেশ দেননি। আগামী রোববার আদেশ হতে পারে।’
মামলা
সূত্রে জানা যায়, রামেক হাসপাতালে ৮০ পাখি হত্যা ও আবাসস্থল ধ্বংসে আনুমানিক ক্ষতির
পরিমাণ এক কোটি টাকা। আর পাখিগুলো হত্যায় পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে আরও দুই কোটি টাকার।
মামলায় রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিবাদী করা হয়েছে। তবে এ মামলায় কারও নাম উল্লেখ
নেই।
রাজশাহী
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬
সালের দিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশের বিভিন্ন গাছে আশ্রয় নিতো শত শত শামুকখোলসহ
অন্যান্য পাখি। তবে ওই সময় গাছ কেটে ভবননির্মাণ কাজ করার কারণে পাখিগুলো বাসস্থান হারায়।
এরপর
পাখিগুলো রামেক হাসপাতালের আশপাশের গাছে গাছে আশ্রয় নেয়। পাখির বিষ্ঠায় রামেকের পরিবেশ
নষ্টের অজুহাতে গত বছর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু গাছের ডালপালা কেটে ফেলেন। এ নিয়ে পরিবেশবাদীরা
প্রতিবাদ করলে গাছের ডাল কাটা বন্ধ হয়।
সম্প্রতি
গত ৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ড্রেন নির্মাণের অজুহাতে দুটি অর্জুন
গাছ কাটা হয়। এতে উড়তে না শেখা শতাধিক শামুকখোল পাখির বাচ্চা মাটিতে পড়ে যায়। ফলে কিছু
পাখি সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়।
আর
কিছু পাখির বাচ্চা জবাই করে নিয়ে যান শ্রমিক ও রোগীর স্বজনরা। এর প্রতিবাদে রাজশাহী,
নাটোর ও নওগাঁয় পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছে।
জানতে
চাইলে রামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘গাছ কাটার
কারণে পাখির মৃত্যুর ঘটনা আমার জানা ছিল না। এমনকি মামলার বিষয়টিও আজ বিভিন্ন সাংবাদিকদের
ফোনের কারণে জানতে পেরেছি। আদালত থেকে মামলা সম্পর্কিত কোনো নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা
গ্রহণ করা হবে।’
ইফাত