• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

‘মাত্র তিন চাইর হাত ভাঙলেই আমার দোকানডা নদীতে চইল্লা যাইবো’

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২১, ১২:৫২ পিএম

‘মাত্র তিন চাইর হাত ভাঙলেই আমার দোকানডা নদীতে চইল্লা যাইবো’

রফিকুল ইসলাম, মাদারীপুর প্রতিনিধি

আমরা খুব ঝুঁকির মুখে আছি, আমার পাশের তিনডা দোকান গতকাল নদীতে লইয়া গেছে। দোকানগুলায় লাখ টাকার মাল আছিলো। আর মাত্র তিন চাইর হাত ভাঙলেই আমার দোকানডাও নদীতে চইল্লা যাইবো। বউ পোলাপাইন লইয়া কি খামু আর কই থাকুম। আমাগো মরা ছাড়া আর গতি নাই। সরকার যদি একটা পাকা বান্ধের ব্যবস্থা করতো তাইলে অন্তত ভরসা পাইতাম।কথাগুলো বলছিলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার মহিষেরচর পুরাতন ফেরিঘাটের দোকানদার অওদুদ খাঁন।

তিনি বলেন, প্রতিবছর এই বর্ষা মৌসুম আসলেই ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। বিগত দিনেও এই এলাকার ৩০ থেকে ৪০টি দোকান নদীতে নিয়ে গেছে। গতবছর বেশ কিছু জিও ব্যাগ ফেলছিল পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন। কিন্তু এইবার এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা। যদি এইভাবে প্রতিবছর নদী ভাঙতে থাকে তাহলে একদিন এই পুরাতন ফেরিঘাট এলাকাটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।


বুধবার ( সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে মাদারীপুর সদর উপজেলার মহিষেরচর পুরাতন ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটের আশপাশে  কয়েকটি দোকান অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় লোকজন। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে কয়েকটি বসতবাড়ি। এলাকার মসজিদসহ আরও ৩০টি দোকানও রয়েছে ঝুঁকিতে। গত দিনেই এই এলাকার  ২টি বসতবাড়িসহ ৩টি দোকান পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার বিভিন্ন এলাকা নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। একই সাথে জেলার বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙনও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া তীব্র স্রোতের ফলে ভাঙনের শুরু হয়েছে। ভাঙনের ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বসতবাড়ি, দোকানপাটসহ ফসলি জমি গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের আতঙ্কে অনেকেই বাড়িঘর দোকানপাট অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

তারা আরও জানান, গত বছর মহিষেরচর (পুরাতন ফেরিঘাট) এলাকায় নদীভাঙন তীব্র হওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মহিষেরচরের বেশ কিছু জায়গায় প্রায় ৬০০০ জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেছিলেন।


নদীতে বিলীন হওয়া ওই এলাকার মজনু মোল্লা  তার বসতবাড়ির জায়গা দেখিয়ে বলেন, ‘ওইখানেই আমার ঘরটা ছিল, গতকালই  ঘরটি নদীতে লইয়া গেছে। কোনোমতে মাল-সামানা লইয়া মানইষের জায়গায় রাখছি। একসময় বড় বড় গাছ আর ৪০ শতাংশ জমি ছিল আমার। এইবার ভাঙতে ভাঙতে আমার বাড়িডাও নদীতে লইয়া গেল। এখন কই থাকমু নিজেও জানি না।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত আজগর মাতুব্বর বলেন, ‘আমার এইখানে একটা মুরগির খামার ছিল। ভাঙনের জন্য সরাইয়া নিছি। আমার পাকা ঘরটা ভাঙনের মুখে আছে। যদি সরকার দ্রুতই কোনো পদক্ষেপ না নেয় তাহলে কয়েকদিনের মধ্যেই আমার মূল বাড়িটাও চলে যাবে।

মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের  নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন,‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অতি দ্রুত ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সবুজ/ডাকুয়া

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ