• ঢাকা শনিবার
    ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

ফুটপাথে ফল বিক্রি করে চলে কলেজ শিক্ষকের সংসার

প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২১, ০৬:২১ পিএম

ফুটপাথে ফল বিক্রি করে চলে কলেজ শিক্ষকের সংসার

কাসেমুর রহমান শ্রাবণ, মাগুরা প্রতিনিধি

অভাব অনটনের সংসারে মানুষ হন আনোয়ারুল ইসলাম। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মারা যান তার বাবা ইছাক মোল্ল্যা। এরপর পারিবারিকভাবে সচ্ছলতা না থাকায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় অন্য ভাইয়েরা আলাদা হয়ে যান। সেখান থেকে মাকে নিয়ে শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন। কখনও টিউশনি, কখনও দিনমজুরি করে চলে তার সংসার।

ছাত্র ভালো হওয়ায় লেখাপড়া চালিয়ে যান আনোয়ারুল। স্থানীয় স্কুল থেকে ২০০২ সালে এসএসসি পাস করেন তিনি। তার পর এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা তিতুমীর কলেজে। সেখানে অর্থাভাবে পড়াশোনা চালাতে না পেরে এক বছর গ্যাপ দিয়ে ভর্তি হন ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে। বায়োলজিতে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেন তিনি।

এরপর ফরিদপুর বায়তুল আমান আদর্শ একাডেমিতে সাড়ে চার বছর শিক্ষকতা করেন। ২০১৬ সালে তিনি মাগুরার বনশ্রী রবীন্দ্র সরণি কলেজে যোগ দেন। নন-এমপিও কলেজ হওয়ায় বিভিন্ন সময় মাগুরা সরকারি কলেজের গেস্ট টিচার টিউশনি করে সংসার চালাতেন তিনি।

দেশে করোনা মহামারি শুরু হলে বন্ধ হয়ে যায় স্কুল-কলেজ। বাড়ি বাড়ি টিউশনি বন্ধ করে দেন অভিভাবকেরা। অসহায় হয়ে পড়েন শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম। কোনো উপায় না পেয়ে বেছে নেন ফল বিক্রির পেশা। কিছু টাকা জোগাড় করে শহরের স্টেডিয়াম গেটে বিভিন্ন রকম ফল বিক্রি করে তার সংসার চলে।

শহরের স্টেডিয়াম পাড়ায় স্ত্রী দুই বছরের মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। বছরখানেক হলো মারা গেছেন মা। তবে এই ফল বিক্রিতে খুব বেশি ভালো নেই তিনি। সব সময় বিক্রি ভালো হয় না। আবার অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায় ফল। অসহায় এই শিক্ষকের বাড়ি মাগুরা সদরে জগদাল ইউনিয়নের সৈয়দ রুপাটি গ্রামে।

আনোয়ারুল ইসলাম সিটি নিউজকে বলেন, ‘দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হলে কলেজ বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে টিউশনিও বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে এই ফল বিক্রির পথ বেছে নেয়া। কী করব বলেন? সংসার তো চালাতে হবে। আমি তো আর চুরি করছি না।

তার পাশে টুপি আতর বিক্রি করা অপর বিক্রেতা খুরশিদ বলেন, ‘আনোয়ারুল স্যার খুব ভালো মানুষ। কিন্তু উনার মতো একজন কলেজের শিক্ষক আমাদের পাশে ফল বিক্রি করছে দেখে খুব খারাপ লাগে।

বনশ্রী রবিন্দ্র সরণি কলেজের অধ্যক্ষ কালী চরণ দাস সিটি নিউজকে বলেন, ‘আমাদের কলেজটি ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২১৫ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। শিক্ষক ২০ জন। কলেজটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় আমাদের সব শিক্ষকই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ইতোমধ্যে একজন শিক্ষক ফুটপাথে ফল বিক্রি করছেন। অনেকে অন্য পেশার চিন্তা করছেন।

জেলার শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আলমগীর কবির বলেন, ‘জেলায় ২টি সরকারি কলেজ রয়েছে। ছাড়া সম্প্রতি টি কলেজ জাতীয়করণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জেলায় ১৯টি এমপিওভুক্ত কলেজ আছে। জেলায় নন-এমপিওভুক্ত কলেজ রয়েছে ৬টি এসব নন-এমপিওভুক্ত কলেজ এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সেসব কলেজের শিক্ষকেরা অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

টিআর/এম. জামান

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ