প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২১, ০৬:১১ পিএম
তাহজীবুল আনাম, কক্সবাজার প্রতিনিধি
ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালীতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সাংবাদিকের সংখ্যা। মহেশখালীতে মূলধারার সংবাদকর্মীর সংখ্যা ৩০-৩৫ জন।
তবে বিভিন্ন অনলাইন, ফেসবুক এবং স্বঘোষিত ফেসবুক
পেজের সাংবাদিক পরিচয়দানকারীর সংখ্যা দুই শতাধিক ছাড়িয়ে
গেছে বলে জানিয়েছেন পেশাদার
সাংবাদিকেরা। সাধারণ মানুষ, জনপ্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এসব হলুদ সাংবাদিকতার
কবলে পড়ে নানাভাবে হয়রানির
শিকার হচ্ছেন।
মহেশখালী
দ্বীপে একটি পৌরসভা ও
৮ ইউনিয়ন। মোট জনসংখ্যা সাড়ে
৩ লক্ষাধিক। প্রতিটি ইউনিয়নে একাধিক সাংবাদিক নামধারী বখাটে যুবকদের হাতে জিম্মি হয়ে
পড়েছে দ্বীপবাসী। সাংবাদিকতার নামে এক শ্রেণির
প্রতারক চক্র চালিয়ে যাচ্ছে
বিভিন্ন অপকর্ম। এমনকি পেশাদার সাংবাদিকেরাও এসব প্রতারক চক্রের
ফাঁদে পড়ে নিজেদের ঐতিহ্য,
সুনাম ও ব্যক্তিত্ব হারাতে
বসেছে।
উপজেলার
বিভিন্ন ইউনিয়নে ব্যাঙের ছাতার মতো জেগে উঠছে
সাংবাদিক নামধারী সংগঠন। যা নিয়ে সচেতন
মহল এবং মহেশখালীর সুশীল
সমাজ নানাভাবে সমালোচনা করছেন। সাংবাদিকতার মান নিয়েও প্রশ্ন
দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন
এই এলাকা পেশাদার সংবাদকর্মীরা। দ্বীপের কালারমারছড়া ইউনিয়নের একটি মাত্র ওয়ার্ডে
২৬ যুবক নিজেদের বিভিন্ন
অনলাইন, ফেসবুক পেজ ও আন্ডারগ্রাউন্ড
পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে রীতিমতো প্রতারণা
চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান ওই
ইউনিয়নের একাধিক ভুক্তভোগী মানুষ।
গত
২ আগস্ট লোকমান হাকিম নামে স্থানীয় এক
সাংবাদিক ফেসবুকে ক্ষোভ
প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘এক
ওয়ার্ডেই ২৬ জন সাংবাদিক!
পুরো ইউনিয়নের কি হালত আল্লাহই
জানে! উপজেলা না হয় বাদ-ই দিলাম। এসব
সাংবাদিক ভাসমান তথ্যে সংবাদ লেখে, ফেসবুকেও চাকরি করে! একেকজন একেকটা
টিভি চ্যানেলের মালিক! এসব সাংবাদিকের সংবাদ
উপস্থাপনায় আমজনতা ব্রিবত! সবকিছুই করোনার উৎপাদন!’
মহেশখালী
প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সদস্য আমিনুল হক জানিয়েছেন, সাংবাদিকতার
জৌলুস হারিয়ে গেছে। আগে সাংবাদিকতা করে
যে আনন্দ ছিল তা এখন
আর নেই। মহেশখালীতে ব্যাঙের
ছাতার মতো গজে উঠেছে
বিভিন্ন নামধারী অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এসব
পোর্টালগুলো ওয়ার্ড থেকে শুরু করে
ইউনিয়নে সাংবাদিক নিয়োগ দিয়ে থাকেন। আবার
দেখা যায় অনেকেই শুধুমাত্র
একটি ফেসবুক পেজ বা ফেসবুক
আইডি খুলে সাংবাদিক নাম
ব্যবহার করে যাচ্ছে। এসব
ফেসবুক পেজের রয়েছে স্যাটেলাইট টেলিভিশনের মতো বুম এবং
আইডি কার্ড। যা দিয়ে রীতিমতো
প্রতারণা করে চলেছে এসব
হলুদ সাংবাদিকেরা। তাদের কারণে পেশাদার সাংবাদিকেরা এক প্রকার ঘরবন্দি
হয়ে পড়েছেন।
মহেশখালী
প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবুল বসর পারভেজ
বলেন, ‘মহেশখালীতে পেশাদার সাংবাদিকের সংখ্যা ৩০-৩৫ জন
হলেও ছোট এই দ্বীপে
সাংবাদিক পরিচয়দানকরীর সংখ্যা এখন ২ শতাধিক
ছাড়িয়ে গেছে। সঙ্ঘবদ্ধভাবে গ্যাং সৃষ্টি করে চাঁদাবাজি ও
মানুষকে জিম্মি করে প্রতারণা চালিয়ে
যাচ্ছে তারা। যার কারণে প্রশাসন
থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি,
রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ
মানুষ চরমভাবে বিভ্রান্তিতে পড়ছে।’
ডেইলি
ইন্ডাস্ট্রি প্রতিনিধি আব্দুস ছালাম কাকলী বলেন, ‘৩০ বছর আগে
যখন সাংবাদিকতায় প্রবেশ করি, তখন এতো
সহজ ছিল না পেশাটি।
সাংবাদিক পরিচয় দিলে যেকেউ সম্মান
করতেন। তখন সাংবাদিকতার মান
ছিল আকাশচুম্বী। এখন সাংবাদিক পরিচয়
দিতেই সংকোচবোধ কাজ করে।’
দৈনিক
পূর্বকোণের প্রতিনিধি হোবাইব সজীব বলেন, ‘সাংবাদিকতায়
এখন অকাল চলছে। ধীরে
ধীরে সম্মান চলে যাচ্ছে এ
পেশার। সাংবাদিক নেতারা যদি এখনই ব্যবস্থা
না নেন তাহলে এ
পেশা বেশি দিন স্থায়ী
হবে বলে মনে হয়
না।’
শামীম/এএমকে