নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
গুলশানের যে বাসায় থাকতেন মোসারাত জাহান মুনিয়া সেই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়ার ভাড়াটিয়া ফর্মে তথ্য ছিল মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত ও তার স্বামীর। তাদের দুজনের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ওই ফর্মের সঙ্গে গেঁথে দেয়া হয়েছিল। আগাম ভাড়াও পরিশোধ করেছিলেন তারা। নুসরাত নিজেও বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন।
তবে তিনি বলেছেন, বাসা ভাড়া নিতে মুনিয়াকে ‘সাহায্য করতে’ তিনি বাধ্য হয়েছিলেন। মামলার তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারাও বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছেন। ফ্ল্যাট ভাড়ার দুই মাসের অগ্রিম দুই লাখ টাকা ‘মুনিয়ার ব্যাংক হিসাব’ থেকে তুলে এনেছিলেন মুনিয়া ও তার বোন নুসরাত।
জানা যায়, ভাড়া নেয়ার জন্য নুসরাত বাড়ির মালিকপক্ষকে বলেন তিনি (নুসরাত), তার স্বামী ও ছোট্ট বোনকে (মুনিয়া) নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে থাকবেন।
কিন্তু নুসরাত বলেন, 'আমি ভাড়া করে দেইনি বা নেইনি। আমি বাসা ভাড়া নিব কেন? মুনিয়া আমাকে ও আমার হাজবেন্ডকে বাড়িভাড়া নেয়ার সময় থাকতে বাধ্য করেছিল। বলেছিল আমাকে বাসাটা নিতে হেল্প কর। আর বাড়িভাড়ার জন্য যে টাকা অগ্রিম দিতে হয়েছে এই টাকা দেয়ার অবস্থা আমাদের নেই এবং মুনিয়ার টাকার ব্যাপারেও কিছু জানতাম না।'
তিনি বলেন, ‘মুনিয়ার সাহায্যের জন্য ওর সঙ্গে ছিলাম। এ সময় আমার ও আমার হাজবেন্ডের ভোটার আইডি কার্ড ভাড়াটিয়া ফর্মের সঙ্গে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা ওই ফর্মে তখন সই করিনি।’
সূত্র থেকে জানা যায়, অগ্রীম ভাড়া নুসরাত তার ব্যাগ থেকে দিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'টাকা তো আমার কাছে থাকতেই পারে। হ্যাঁ, আমি দিয়েছিলাম। ও অগ্রিম বাসা ভাড়া দেয়ার জন্য যখন ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছিল, তখন আমাকে টাকাগুলো দিয়েছিল। মুনিয়া ‘হ্যান্ডপার্স’ নিয়েছিল। সেখানে তো এতগুলো টাকা রাখার জায়গা হয় না। তাই আমাকে সেই টাকাগুলো দিয়েছিল।’
আর এই টাকা মুনিয়ার ব্যাংক হিসাব থেকে ক্যাশ করা হয়েছিল। সেগুলো তার একাউন্টে রাখা হয়েছিল। তবে সেগুলো কিসের টাকা বা কোথা থেকে এসেছে তা তিনি জানেন না বলে দাবি করেছেন।
অন্য এক সূত্রে জানা গেছে, নুসরাত ফ্ল্যাট মালিককে জানিয়েছিল, তিনি তার স্বামী মিজানুর রহমান সানি ও ছোট বোন মুনিয়াকে নিয়ে থাকবেন। এই শর্তেই তাদেরকে ফ্ল্যাট ভাড়া দেয়া হয়।
গত ২৬ এপ্রিল রাজধানীর গুলশানের ওই ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার বড় বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসান বলেন, আমরা নিরপেক্ষভাবে মামলাটি তদন্ত করছি।
তবে, কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে এটা জানতে পোস্টমর্টেম রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর এত টাকা দিয়ে তিনি এখানে বাসা ভাড়া করে কীভাবে থাকতেন, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোথা থেকে টাকা আসত-সবই তদন্ত হচ্ছে। আমরা মুনিয়ার বোনকে থানায় ডেকেছি। দুই-একদিন পর তিনি আসবেন বলেছেন।
এদিকে মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমান সবুজ গণমাধ্যমে জানান, তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম মারা যান ২০১৫ সালে আর মা মারা যান ২০১৯ সালে। এরপর থেকে মুনিয়া সম্পূর্ণভাবে নুসরাত ও তার স্বামীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। ছোট বোনের এ পরিণতির জন্য সবুজ নিজেও তার বোন নুসরাত ও তার স্বামীকে দায়ী করেন।
সাদ/সবুজ/এএমকে
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন