• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ঘন ঘন ভূমিকম্পে আতঙ্কিত

গত ১৫ দিনে মাঝারি ভূমিকম্প কি বার্তা বহন করে!

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩, ০১:৩৫ এএম

গত ১৫ দিনে মাঝারি ভূমিকম্প কি বার্তা বহন করে!

গত দুই বছরে দেশে ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বাংলাদেশের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হওয়া অন্যতম বড় ভূমিকম্পটি ঘটে ১৭৬২ সালের এপ্রিল মাসে। ১৯০৮ সালের ‘ইস্টার্ন বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গ্যাজেটিয়ার চিটাগাং’-এর তথ্য অনুযায়ী, ১৭৬২ সালের ভূমিকম্পে চট্টগ্রাম জেলার অনেক জায়গায় মাটি ফেটে প্রচুর পরিমাণে কাদা-পানি ছিটকে বেরোয়। ‘পর্দাবন’ নামক জায়গায় একটি বড় নদী শুকিয়ে পড়ার বর্ণনাও পাওয়া যায় তখন।

ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখে তুরষ্ক-সিরিয়ায় আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্প আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে পুরো বিশ্ববাসীর মনে। ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প ও তার কয়েকটি আফটারশক (মূল ভূমিকম্পের পর পুনরায় ভূকম্পন)-এর কারণে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন লাখ-লাখ মানুষ। ভূমিকম্পের এই ভয়াবহ চিত্র দেখে অনেক ভূমিকম্পপ্রবণ দেশই আবার চিন্তিত হয়ে উঠেছে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে স্বল্প ও মাঝারি মাত্রার বেশ কিছু ভূমিকম্প হয়েছে। তবে এগুলোর কোনোটিতেই দৃশ্যমান ক্ষয়ক্ষতি ঘটেনি। ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থান হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা বারবারই সতর্কবার্তা দিচ্ছেন দুর্যোগের পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে।

তুরষ্ক-সিরিয়ায় আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর গত ১৫ দিনে পৃথিবীর বহু জায়গায় মাঝারি ভূমিকম্প অনুভত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের সিকিম, আফগানিস্তান সহ বাংলাদেশ। 

আজ শনিবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে চট্টগ্রামে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এতে কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। রিখটার স্কেলে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ৪ দশমিক ১। এটির উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব মিয়ানমারে। অবস্থানগত কারণে ততটা শক্তিশালী না হলেও শক্তিশালী ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে ৪ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।  রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে দেশটিতে এ কম্পন অনুভূত হয়।

পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) আঘাত হেনেছে একটি মাঝারি ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে, ভূমিকম্পে চারজন মারা গেছেন। 

বিগত সময়ে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি রাজ্য এবং বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এসব ভূমিকম্প খুব বেশি শক্তিশালী না হলেও দেশের জন্য মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম সিটি নিউজকে বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর তুলনায় দেখা গেছে এখন ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে। ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়’।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে দেশকে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে ৮টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য এলাকা। ঢাকা হচ্ছে দ্বিতীয় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। আর তৃতীয় ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা হচ্ছে খুলনা, রবিশাল ও সিলেট অঞ্চল। এ প্রসঙ্গে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভূগর্ভের যেসব স্থানে টেকটোনিক প্লেট রয়েছে সেগুলো ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। প্লেটগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে এ ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে এই টেকটোনিক প্লেটপ্রবণ দেশ হচ্ছে মিয়ানমার, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া। 

বিগত সময়ে দেখা গেছে, এই দেশগুলোতেই বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে টেকটোনিক প্লেটের এক একটির সঙ্গে অপরটির ধাক্কা। যে জায়গাগুলোতে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, সেগুলোকে সাবসনিক জোন বলা হয়। তিনি জানান, ওইসব স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হলে বাংলাদেশেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তাছাড়া দেশে দুটি সাবসনিক জোন রয়েছে।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই বছরের সার্বিক পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা গেছে, দেশে ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে। ছোট ছোট এই ভূমিকম্পগুলো যদিও বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় ডেকে আনেনি তবে এটি তার সতর্কবার্তা দিচ্ছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে।

 

আরিয়ানএস/

আর্কাইভ