• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

যে কারণে এবি ব্যাংক কাকরাইল শাখা থেকে ফরিদ আহম্মেদ ক্লোজ

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২২, ০৬:৩১ পিএম

যে কারণে এবি ব্যাংক কাকরাইল শাখা থেকে ফরিদ আহম্মেদ ক্লোজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ফরিদ আহম্মেদ ফকির। দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক আরব বাংলাদেশ (এবি) ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ছিলেন ব্যাংকটির কাকরাইল শাখার ব্যবস্থাপক। অতি সম্প্রতি তাকে সেখান থেকে ক্লোজ করে প্রধান কার্যালয়ের ইসলামী ব্যাংকিং ডিভিশনে নেয়া হয়েছে। ব্যাংকের ভিআইপি গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা ও হয়রানির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ঋণ সুবিধা দেয়ার প্রলোভনে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। পরবর্তিতে দু-একজনকে ঋণ সুবিধা দিলেও সিংহভাগকে ঋণ দেননি তিনি। এতে ঋণ না পেয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত ৯ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে করা এমন একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বিআরপিডি সার্কুলার, তারিখ ১৬ মে ২০১৯ মূলে ঋণ খেলাপিদের ঋণ পূনঃতফসিল করার জন্য দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্টের মাধ্যমে রিসিডিউল করার সুযোগ প্রদান করেন। সে সময় এরশাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান এরশাদ আলী ১৩৪ কোটি ৪০ লাখ ৭৭ হাজার ৯৭ টাকা লোনের দুই শতাংশ হারে দুই কোটি ৬৮ লাখ ৮১ হাজার ৫৪২ টাকা জমা দেয়ার জন্য বিআরপিডি সার্কুলার মূলে এবি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক কাকরাইল শাখার ব্যবস্থাপক ফরিদ আহম্মেদ ফকিরের নিকট রিসিডিউলের আবেদন করেন। পরে ফরিদ আহম্মেদ ফকিরের পরামর্শে এরশাদ আলী ইসলামী ব্যাংক কাকরাইল শাখায় ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ২০ লাখ টাকা রিসিডিউলের জন্য জমা দেন।

পূনরায় ৮০ লাখ টাকার পে-অর্ডার এবং অবশিষ্ট  এক কোটি ৬৮ লাখ ৮১ হাজার ৫৪২ টাকার চেক প্রদান করতে গেলে শাখা ব্যবস্থাপক ফরিদ আহম্মেদ ফকির তা গ্রহণ না করে এরশাদ আলীকে ফিরিয়ে দেন। শাখা ব্যবস্থাপক ফরিদ আহম্মেদ ফকির কর্তৃক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০ লাখ টাকা গ্রহণ করেও ঋণ পূনঃতফসিল না করায় এরশাদ গ্রুপের পূর্বের লোন অনিয়মিত হয়ে পরে। ফলে ব্যবসায়িকভাবে চরম ক্ষতির মুখে পড়েন এরশাদ আলী। পরবর্তিতে ঋণ পূনঃতফসিলের জন্য জমাকৃত ২০ লাখ টাকা ফেরত চাইলে ফরিদ আহম্মেদ ফকির গড়িমসি শুরু করেন।

এক পর্যায়ে জমাকৃত টাকা ফেরত দেয়ার জন্য এরশাদ গ্রুপ চাপ সৃষ্টি করলে- ঋণ পূনঃতফসিলের জন্য প্রদানকৃত ২০ লাখ টাকা ভিন্নখাতে খরচ দেখিয়ে শাখা ব্যবস্থাপক ফরিদ আহম্মেদ ফকির এরশাদ আলীকে চিঠি প্রদান করেন এবং এরশাদ আলীর বিরুদ্ধে জামানত চেক দ্বারা আদালতে ৫টি মামলা দায়ের করেন। এর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং সামাজিকভাবে সম্মানহানির শিকার হন এরশাদ গ্রুপ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন ফরিদ আহম্মেদ ফকির। শুধু তাই নয়, কাকরাইল শাখা থেকে তাকে ক্লোজ করার বিষয়টিও স্বাভাবিকভাবেই দেখছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। আর এরশাদ গ্রুপের ২০ লাখ টাকা আমি আত্মসাৎ করিনি, সেটা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে।’

এর আগে এবি ব্যাংক থেকে ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডারের মাধ্যমে ১৭৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। সেই মামলায় ব্যাংকটির ১৫ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার (১৪ জুন) আদালতের আদেশ পালনে কী পদক্ষেপ নিয়েছে সে বিষয়ে সেই বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও অ্যাডিশনাল এসপির (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৬ জুনের মধ্যে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন আদালত।

এবি ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এবি ব্যাংক থেকে ১৭৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় শুধু ১৫ কর্মকর্তাই নয় আরও অনেকে জড়িত আছে। সেখানে ফরিদ আহম্মেদ ফকিরের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই মামলার তদন্ত যেন প্রভাবমুক্ত হয় সে কারণেই তাকে কাকরাইল শাখা থেকে  ক্লোজ করা হয়েছে।

 

এইচএ/এএল

আর্কাইভ