• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১
পেনিকড বায়িং, কিছুটা মজুদ, কিছুটা ডিলার পর্যায়ের মজুদ

‘কিছু সংবাদে’ বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়, সয়াবিন তেল প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫, ০৯:৫৬ পিএম

‘কিছু সংবাদে’ বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়, সয়াবিন তেল প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বাজারে সয়াবিন তেলের যে সংকট চলছে তার দায় সংবাদমাধ্যমের ওপর চাপিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। তবে তেল সরবরাহে ‘কিছু অসুবিধা’ থাকার কথা তুলে ধরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগার আভাস দেন তিনি।

বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “এই মুহূর্তে বাজারে তেলের প্রাপ্যতা নিয়ে কিছু আসুবিধা আছে। এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সরবরাহের যে অসঙ্গতি হয়েছে, সেটা মাননীয় নৌ উপদেষ্টার কাছ থেকে জানতে পারলাম যে চিটাগাং বন্দরে অনেক জাহাজ এখন ভাসমান গুদাম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আমি নিজে চিটাগাং বন্দরে খবর নিয়েছে। সেখানে চিনির জাহাজ কিছু আছে। কিন্তু তেলের জাহাজ এজ সাচ ওই রকম নাই।“

সরকার সবসময় তো চেষ্টা করে বাজার ঠিক করার জন্য। তবুও কেন তেলের সংকট? এমন প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “ওই যে আমি বললাম। কিছু সংবাদ এমনভাবে প্রকাশিত হয়, যে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। তারপর কিছুটা পেনিকড বায়িং, কিছুটা মজুদ, কিছুটা ডিলার পর্যায়ের মজুদ।”

এদিন সচিবালয়ে ‘বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির’ বৈঠক শেষে বিফ্রিংয়ে আসেন বাণিজ্য উপদেষ্টা বশির উদ্দিন ও শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।

এ কমিটির প্রধান সাখাওয়াত হোসেন বেক্সিমকোর শিল্প কারখানার সংকটের বিষয়ে বলেন, “বেক্সিমকোর পুরো অ্যাসেট বিক্রি করার পরও ব্যাংকের ঋণ শোধ হবে কি না সন্দেহ। আমার ধারণা পাবে না। আমরা এই পরিস্থিতির মধ্যে আছি।“

পরে বিফ্রিংয়ে বাজারে সয়াবিন তেলের সংকটের প্রসঙ্গ আসে।

গত ডিসেম্বরে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোকে কেন্দ্র করে এক দফায বাজারে সরবরাহ সংকট হয়েছিল। পরে সরকার দাম বাড়িয়ে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৫৭ টাকা, খোলা পাম তেল ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করে।

এছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা।

তবে দাম বাড়ালেও সেই সময় শুরু হওয়া সংকটের পুরো সুরাহা হয়নি। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়তি। অনেক এলাকায় বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহও নেই।

এ নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন শুরু করলে প্রথমেই উত্তর দেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি নৌ-মন্ত্রণালয় সামলানো এই উপদেষ্টা বলেন, “বাহির্নোঙ্গরে তেলসহ অন্যান্য রোজার পণ্যে নিয়ে অনেকগুলো জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে। এগুলো খালাস হচ্ছে না। কালকে এ নিয়ে একটা মিটিং করা হয়েছে। আজকে ম্যাজিস্ট্রেট এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

”যাদের যাদের লাইটারেজ আছে তারা নিজেদের জিনিস নিয়ে আনাচ কানাচে বসে আছেন। যাতে বাজার একটু ইয়ে হলে তারপর তারা বাজারে যাবে। এতে লাইটারেজের সঙ্কট হচ্ছে। যদিও এসব লাইটারেজের পণ্য খালাসে ব্যস্ত থাকার কথা। এটা হচ্ছে না বলেই এখানে কিছুটা জ্যাম হয়ে আছে। এগুলো খালাস পেয়ে গেলে বাজারে কোনো সমস্যাই থাকবে না।

তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট ইতোমধ্যে ৩৯ জনকে জরিমানা করেছে। পণ্য আনলোড করা হয়েছে।

যারা সংকট সৃষ্টি করে তেলের দাম বেশি নিচ্ছে সেসব কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না? এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বশির উদ্দিন বলেন, কী কারণে দায়ী? এখানে শুধু কোম্পানিকে এককভাবে দায়ী করার সুযোগ সম্ভবত নেই। কারণ, প্রাথমিক ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে বাংলাদেশে বেশ কিছু এসও ব্যবসায়ী রয়েছেন। এবং মিডিয়াতে যখন এই ধরনের নিউজ হয়, এই নিউজের ফলেও খুচরা ও ডিলার পর্যায়ে সবাই এক ধরনের মজুদে অনুপ্রাণিত হয়। একটন চাহিদার বিপরীতে তিন টন মজুদ যদি না দেওয়া হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত তার গুদামজাত করার সক্ষমতা থেকে যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত বাজারে বিভিন্ন রকমের নিউজের কারণে একটা অস্থিরতা কাজ করে।

“মিলগুলো থেকে আমরা ডেটা নিচ্ছি। আমরা দেখছি তারা প্রয়োজনের থেকেও অতিরিক্ত তেল তারা সরবরাহ করছে। আমরা ভোক্তা অধিকার ও কাস্টমস থেকে লোক পাঠিয়ে ডেটা সংগ্রহ করে দেখছি- প্রয়োজন থেকে অতিরিক্ত তেল বাজারে সরবরাহ হচ্ছে। কিন্তু মজুদের যে ঘটনাটা ঘটছে এব্যাপারে আপনারা আপনাদের অনুসন্ধানী সংবাদিকতার মাধ্যমে জিনিসটাকে প্রকাশিত করবেন এবং আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”

আর্কাইভ