প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪, ১১:৫৬ পিএম
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চলমান ৪৭০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির বাইরে অতিরিক্ত ৭৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। এটি অনুমোদন পেলে আইএমএফ থেকে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫৩০ কোটি ডলার। অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলা এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে এই ঋণ চাওয়া হয়।
তবে এ ঋণ পেতে বিদ্যুৎ ও সারের ভর্তুকি ব্যয় এবং বকেয়া মোকাবিলার জন্য একটি কৌশল গ্রহণ করতে বলেছে আইএমএফ। তবে বিদ্যুৎ ও সারের ভর্তুকি সমন্বয় করতে গেলে এ দুই পণ্যে দাম বাড়বে। যদিও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জুন পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বাড়াতে রাজি নয় সরকার। চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় চতুর্থ কিস্তিতে ৬৪৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড়ের বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছে বলে বুধবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে আইএমএফ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, আইএমএফ-এর চলমান ঋণ কর্মসূচির বাইরে বাংলাদেশ ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব দেয়। এর বিপরীতে কঠিন শর্তসাপেক্ষে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং নতুন ঋণ বিষয়ে আলোচনা করতে ৩ ডিসেম্বর থেকে আইএমএফ-এর গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রো ইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করছে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার বিকালে অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধিদল বৈঠক করেছে।
আইএমএফ-এর পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপিতে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা মোকাবিলা করা অপরিহার্য। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও শাসনব্যবস্থা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে সংস্থাটি মনে করে, আর্থিক খাতের সংস্কার সফলভাবে বাস্তবায়ন হবে। এছাড়া খেলাপি ঋণের সঠিক তথ্য নিশ্চিত এবং আর্থিক খাত পুনর্গঠনে রোডম্যাপ তৈরি করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আইন সংস্কার করে নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও করপোরেট শাসনকে শক্তিশালী করতে বলা হয়। সেখানে আরও বলা হয়, ক্রমাগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বৈদেশিক সহায়তার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এ সহায়তার জন্য রাজস্বভিত্তিক একীকরণ বজায় রাখা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি কঠোর এবং মুদ্রা বিনিময় হার সংস্কার করার পাশাপাশি একটি সুস্থ ও প্রতিযোগিতামূলক আর্থিক খাত প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্র“তি দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে বর্তমানে অর্থনীতির মন্থর গতি, ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। বিশেষ করে ব্যাংক খাত থেকে অর্থ বিদেশে চলে যাওয়ায় চাপের মধ্যে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রা তহবিল। একই সঙ্গে কর রাজস্ব হ্রাস পেয়ে সরকারের ব্যয়কে চাপের মুখে ফেলছে। আর্থিক খাতের কিছু অংশের চাপের কারণে এ চ্যালেঞ্জ আরও বেড়েছে। পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থান, বন্যা ও কঠোর নীতির কারণে ২০২৫ সালে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে পুনরুদ্ধার হয়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। আর মূল্যস্ফীতি প্রায় ১১ শতাংশে বিরাজ করবে। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার মোকাবিলার জন্য স্বল্পমেয়াদি নীতি কঠোর করা, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় রোধ, করছাড় অপসারণ এবং মুদ্রা বিনিময় হারের নমনীয়তা দরকার।
আইএমএফ ন্যায্য কর জিডিপির অনুপাত, স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা ও টেকসই রাজস্ব বাড়াতে শুরুরি কর সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া করছাড়ের যৌক্তিককরণ, প্রশাসন থেকে কর নীতিকে পৃথক করার ওপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও সার খাতে ভর্তুকি ব্যয় এবং বকেয়া মোকাবিলা করার জন্য একটি ব্যাপক কৌশলও প্রয়োজন।
ঢাকায় সফরকালে আইএমএফ প্রতিনিধিদলটি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এআর খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তির আওতায় জুনে তৃতীয় কিস্তি ১১৫ কোটি ডলার ছাড়ের অনুমোদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এর ফলে তিন কিস্তিতে আইএমএফ-এর কাছ থেকে পেয়েছে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার। তবে চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের পর মোট প্রাপ্য দাঁড়াবে ২৯৫.৫ কোটি মার্কিন ডলারে।
লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং বাজেট-সহায়তা বাবদ বাংলাদেশ ২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফ-এর কাছে ঋণ চায়। বাংলাদেশের ঋণ আবেদনের ছয় মাস পর সংস্থাটি গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।