প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪, ১০:৩১ পিএম
লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর পরও বাজারে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট কাটেনি। দুই, তিন ও পাঁচ লিটারের তেল কিছুটা সরবরাহ করলেও এক লিটারের তেল এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি সরকার নির্ধারিত মূল্যে মিলছে না তেল। এতে ক্রেতার পণ্যটি কিনতে এখনও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন-সরকারিভাবে ভোজ্যতেলের দাম আরও বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে কোম্পানিগুলো। যে কারণে এখনও বাজারে সরবরাহ করছে না।
শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৫ ও খোলা সয়াবিনের দাম ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে রাজধানীর খুচরা বাজারে এই দামে তেল নেই। খোলা সয়াবিন তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা। দু-এক দোকানে আগের কেনা এক লিটারের বোতল তেল মিললেও বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।
রাজধানীর জিনজিরা কাঁচাবাজারের মুদি বিক্রেতা সোহেল বলেন, সরকার নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে। পাঁচ লিটারের তেল ৮৩৭ টাকা কিনে ৮৫২ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। দুই দিক থেকে লাভ করছে কোম্পানিগুলো। তিন লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৫১৬ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বিক্রি করতে হচ্ছে ৫২৫ টাকায়। খোলা সয়াবিন লিটারপ্রতি ১৮৮ টাকায় ডিলারদের কাছে কিনতে হয়। বিক্রি করতে হচ্ছে ১৮৫ টাকায়। পাম অয়েল ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিনতে হচ্ছে ১৭১ টাকায়।
তিনি জানান, ডিলাররা এখনও তেলের সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক করেনি। সরকারিভাবে মূল্য আরও বাড়ানার জন্য এখনও বাজারে সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। এক লিটারের তেল এখনও ডিলাররা দেননি। আর এখন লিটারপ্রতি কোম্পানিগুলো আমাদের ৩ টাকা লাভ করার সুযোগ দিয়েছে। যা আগে ৪-৫ টাকা ছিল। এতে ভোক্তার সঙ্গে আমাদেরও ঠকাচ্ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, সরকারিভাবে তেলের দাম বাড়িয়ে বাজারে সরবরাহ ঠিক করার কথা বলেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। কিন্তু দাম বাড়লেও ক্রেতারা তেল পাচ্ছেন না। পেলেও নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি দরে কিনতে হচ্ছে। আমরা দেখেছি বিক্রেতারা এখনও তেল পাচ্ছেন না। এই অবস্থায় সরকারসংশ্লিষ্টদের বাজারসহ কোম্পানিগুলোর মিলগুলোতে কঠোরভাবে তদারকি করা দরকার। অনিয়ম পেলে শাস্তির আওতায় আনা দরকার।
অন্যদিকে সরবরাহ বাড়ায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজ, আলু ও সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। কেজিতে ৪০ টাকা কমে শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা। বাজারে দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজ কেজিতে ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা দরে। এই একই পেঁয়াজ এক সপ্তাহ আগেও ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নয়াবাজারের বিক্রেতা আল আমিন বলেন, বাজারে নতুন পেঁয়াজ ওঠা শুরু করেছে। পাতা পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা আগের মজুত পেঁয়াজ বাজারে ছাড়তে শুরু করেছে। এতে দাম কমে আসছে।
এছাড়া আমদানি ও নতুন আলুর সরবরাহ বাড়ায় রাজধানীর খুচরা বাজারে আলুর দামও কমতে শুরু করেছে। নতুন আলু কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কেজিতে ১০ টাকা কমে পুরাতন আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা। বাজারে শীতের সবজির সরবরাহও বেড়েছে। ফলে কমতে শুরু করেছে দাম। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। যা কয়েকদিন আগেও ৮০-১০০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা। যা আগে ৪০-৪৫ টাকা ছিল। প্রতি কেজি শালগম ৪০-৫০, বেগুন ৪০-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা।
এদিকে খুচরা বাজারে গত সপ্তাহের মতো মুরগি ও ডিম একই দামে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৮৫ টাকা। বাজারভেদে প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৯০ টাকা। পাশাপাশি ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়।