প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৪, ১১:১৩ পিএম
যে পরিমাণ তেল আছে তা দিয়ে অনায়াসে আরও দুই মাস চলবে। তারপরও বিশ্ববাজারে দাম বেশি ও আমদানি কমের অজুহাতে ৬ কোম্পানি কারসাজি করেছে। রোজা শুরুর চার মাস (নভেম্বর) আগ থেকেই ডিলারের কাছে পর্যাপ্ত সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। এতে খুচরা পর্যায়েও কমেছে সরবরাহ। ফলে বাজার থেকে বোতলজাত তেল উধাও হয়ে গেছে। দুই-এক দোকানে মিললেও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। তাই খোলা তেলের ওপর চাপ বাড়ায় দামও হু-হু করে বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা। শনিবার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০২২ সালে মার্চে ভোজ্যতেল নিয়ে আমদানিকারক ও উৎপাদক ছয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কারসাজির প্রমাণ পায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তখন দেখা যায়, অতি মুনাফা করতে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর সিন্ডিকেট বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয়। এতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়। হু-হু করে বাড়ে দাম। অস্থির হয়ে ওঠে ভোজ্যতেলের বাজার। ওই সময় প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ২১০-২২০ টাকায় বিক্রি হয়। তখন অধিদপ্তর মিলগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে। সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে এপ্রিল মাসে ২৪ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। তারপরও মন্ত্রণালয় কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। বরং তেলের দাম ব্যবসায়ীদের চাহিদামতো দাম বাড়িয়ে মন্ত্রণালয় থেকে নতুন মূল্য ঘোষণা করা হয়। এতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও ক্রেতার বাড়ে নাভিশ্বাস।
ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, সরকারি হিসাবে বছরে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে ২২ লাখ টন। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে ২ লাখ টন ভোজ্যতেল উৎপাদন হয়। এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি হয় ২৩ লাখ টন। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যমতে, চলতি বছরের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে দেশে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার টন। গত বছরের একই সময়ে এই আমদানির পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৬০ হাজার টন। সে হিসাবে আমদানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। কিন্তু দেশে এক মাসের তেলের চাহিদা ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৩৩ টন। এ হিসাবে দেশে যে পরিমাণে তেল মজুত আছে তা দিয়ে আরও দুই মাস অনায়াসে চলার কথা। তারপরও আমদানিকারকরা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করছে না। এতে খুচরা পর্যায়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, সংকটের কোনো কারণ নেই। আমরা বিগত দিনে দেখেছি দেশে ৫ থেকে ৬টি কোম্পানি সয়াবিনের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ার পর সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়। সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়ে তারা সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয় দাম বাড়ানোর। এবারও সেটাই করা হচ্ছে। রোজা ঘিরে তারা এমন কারসাজি করছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের উচিত এখন কোম্পনিগুলোর কাছে কী পরিমাণে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল মজুত আছে তার খোঁজ নেওয়া। কোনো অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
শনিবার রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের মুদি দোকানগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন নেই। দু-একটি দোকানে পাওয়া গেলেও রাখা হচ্ছে গায়ের দাম থেকে বেশি। ক্রেতারা বলছেন, দোকানিরা আগের কেনা তেল এখনো বিক্রি করছে। তবে নতুন করে তারা তেল পাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে খুচরা বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল লিটারপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। শনিবার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হয় ১৬০-১৬২ এবং খোলা সয়াবিন ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৬৭-১৭০ টাকা, দুই লিটার ৩৩৪ টাকা ও ৫ লিটার ৮১৮ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়াতে ও বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানিতে দুই দফায় শুল্কু-কর কমানো হয়। প্রথম দফায় ১৭ অক্টোবর ও দ্বিতীয় দফায় ১৯ নভেম্বর শুল্ক-কর কমিয়ে নামানো হয়েছে শুধু ৫ শতাংশে। তারপরও তেলের বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দাম কমেনি বরং সরবরাহ কমিয়ে সংকট তৈরি করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে দাম।
ভোজ্যতেলের বিষয়ে টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তাসলিম জানান, সরকার শুল্ক-কর যা কমিয়েছে, তার চেয়ে বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে বেশি। কোম্পানিগুলো লোকসানের ঝুঁকিতে থাকলেও সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। চলতি মাসে সরবরাহ বাড়িয়েছে।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বাজারে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে ভোজ্যতেলের বিষয়টিও দেখা হচ্ছে। কেন বাজার থেকে উধাও হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।