• ঢাকা শনিবার
    ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

পেঁয়াজে ঝাঁজ বেশি, সিন্ডিকেটকে দায়ী তবে সবজিতে স্বস্তি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৪, ০৬:৪৫ পিএম

পেঁয়াজে ঝাঁজ বেশি, সিন্ডিকেটকে  দায়ী তবে সবজিতে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

শীতকালীন সবজি বাজারে উঠতে শুরু করায় কাঁচাবাজারে বর্তমানে খানিকটা স্বস্তি ফিরলেও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে পেঁয়াজের আকস্মিক দর বৃদ্ধিতে। এছাড়া বাড়তির দিকে আলুর দামও। পাশাপাশি খুঁচরা পর্যায়ে বাজার ভেদে কিছুটা বাড়তি দরেই বিক্রি হচ্ছে ডিম। অথচ ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে ডিম, পেঁয়াজ ও আলুতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এদিকে দাম বৃদ্ধির জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকেই দায়ী করেছেন ভোক্তারা।

রোববার ( ২৭ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ানবাজার কাঁচাবাজার ও তেজগাঁয়ের ডিমের আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, দুই তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে জাত ভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। পাশাপাশি আলুর দামও বেড়েছে প্রতি কেজিতে ৫ টাকা করে। তবে সবজির বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। দামও অনেকটাই নাগালের মধ্যে।

বিশেষ করে বেগুন, কাঁচামরিচ এবং লাউয়ের মতো সবজির দাম কমেছে প্রায় অর্ধেক। বেগুন প্রতি কেজি ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ১৪০ টাকা এবং লাউ বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি আকৃতি ভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। অথচ এক সপ্তাহ আগেই বেগুন ১২০ টাকা, লাউ একশ টাকা এবং কাঁচামরিচ ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয় রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে। অন্যান্য সবজির মধ্যে ঝিঙ্গা প্রতি কেজি ৫০, করলা ৮০ টাকা, কচু ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ছোট সাইজের কুমড়া প্রতি পিছ ৪০ টাকা, ফুলকপি-সাইজ ভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, এবং বাঁধাকপি ৬০ টাকা প্রতিটি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম এখনও চড়া রয়েছে সিম এবং টমোটোর। সিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি  দরে এবং টমেটো ১৮০ টাকা কেজিতে।

কাঁচাবাজারে স্বস্তি মিললেও ভোক্তাদের মুখের হাসি কেড়ে নিচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পেঁয়াজ ও আলুর দাম। বিশেষ করে পেঁয়াজের বাজারে শুরু হয়েছে অস্থিরতা। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম মাত্র দুই তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে জাত ভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির এ প্রবণতার পেছনে সুস্পষ্ট কোনো কারণ জানাতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। তবে সরবরাহ সঙ্কটের কথা উল্লেখ করেছেন তারা। যদিও ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। পাশাপাশি পেঁয়াজের শুল্ক প্রত্যাহার করেছে সরকার। এ পরিস্থিতিতে ভোক্তারা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন।

রাজধানীর কারওয়ানবাজারে পেঁয়াজের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১২০টাকা, দেশি পেঁয়াজের মধ্যে ফরিদপুরের পেঁয়াজ ১৩০ টাকা এবং পাবনার পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, দুই তিন দিনের মধ্যে দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। অথচ পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর প্রভাবে দাম কমার কথা থাকলেও উল্টো দাম বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের। অপরদিকে হিলিস্থল বন্দরেও ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা গেছে।

হিলির আমদানিকারকদের দাবি ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়েনি, মূলত দেশি পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির সামগ্রিক প্রভাব পড়েছে বাজারে। হিলিতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯৫ থেকে ১শ টাকা করে। অথচ দুই তিন আগেও আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা করে।

শুধু পেঁয়াজের দামই নয়, দাম বেড়েছে আলুরও। কারওয়ানবাজারে  প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। অথচ দুই তিন আগে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা দরে।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত দুই তিন দিনে প্রতিদিনই কেজিতে এক দুই টাকা করে বেড়েছে আলুর দাম। আলুর দাম বৃদ্ধির জন্য বিক্রেতারা সরবরাহ হ্রাসকে দায়ী করলেও বাজার ঘুরে আলুর কোন সঙ্কট চোখে পড়েনি।

তবে খুচরা বিক্রেতারা দায়ী করছেন পাইকারি বিক্রেতাদের। আর পাইকাররা দায়ী করছেন হিমাগারের সিন্ডিকেটকে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ প্রতিবার হাতবদলেই দাম বাড়ানো হচ্ছে আলুর। যার জেরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে খুচরা বিক্রেতা ও ভোক্তাদের।

আলু উৎপাদনে দেশের অন্যতম শীর্ষ জেলা মুন্সিগঞ্জেও আলুর দাম বাড়তি। সেখানে হিমাগারে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৭ থেকে ৪৮ টাকায়।

মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সামির হোসেন সিয়াম বলেন, আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে খুচরা বাজার থেকে শুরু করে হিমাগার পর্যন্ত তদারকি করা হচ্ছে। কেউ যেন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আলুর দাম না বাড়াতে পারে সেদিকেও কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। যদিও এসব বক্তব্যের প্রভাব নেই বাজারে আলুর দামে।

পাইকারি পযায়ে ডিম সরকারের বেঁধে দেয়া দরেই বিক্রি হলেও খুচরা পর্যায়ে বাজার ও স্থান ভেদে ডিম বিক্রি হচ্ছে সরকারের বেঁধে দেয়া দামের থেকেও বেশি দরে।

তেজগাঁয়ের ডিমের আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে পাইকারি পর্যায়ে ডিম সরকারের বেঁধে দেয়া দাম ১১ টাকা ১ পয়সা দরেই বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা বিক্রির কথা থাকলেও বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে তার থেকে কিছু বেশি দরে। এছাড়া মহল্লাগুলোর মুদির দোকানেও ডিমের দাম নেয়া হচ্ছে বেশি। কারওয়ানবাজারে কিচেন মার্কেট সংলগ্ন ডিমের দোকানে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা করে, আবার মহল্লাগুলোতে ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৬০ টাকা দরে।

এদিকে মুরগির দামেও পার্থক্য চোখে পড়েছে বাজার ভেদে। সরকারের বেঁধে দেয়া দামের আশপাশে কারওয়ানবাজারে মুরগি বিক্রি হলেও অন্যান্য বাজারে কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম নেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ করেছেন ভোক্তারা।

সরকার সম্প্রতি ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা এবং সোনালী মুরগি (কক) প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয়।এদিন কারওয়ান বাজারে ব্রয়লার ১৮০ টাকা করে বিক্রি হলেও সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি দরে। তবে অনেক স্থানেই ব্রয়লার প্রতি কেজি দুইশ টাকা এবং সোনালী মুরগি তিনশ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।

অর্থ ও বাণিজ্য সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ