• ঢাকা রবিবার
    ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

দেশের সার্বিক অর্থনীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ পেছাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৪, ১১:৫৮ পিএম

দেশের সার্বিক অর্থনীতির  হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ পেছাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশের সার্বিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের হালনাগাদ তথ্য ও বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ পিছিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগে যে তথ্য প্রতি সপ্তাহে প্রকাশ করত, এখন সেটা মাসে করবে। 

এসব তথ্য বা বিশ্লেষণ এমন সময় প্রকাশ করছে, যখন এগুলোর কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলছে। দেশের অর্থনীতি যখন মন্দা মোকাবিলা করছে, নানা গুজবের ডালপালা মেলছে, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

এতে অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জনগণের সামনে থেকে আড়াল করা হচ্ছে। ফলে গুজবনির্ভর তথ্যের ছাড়াছড়ি বাড়বে। গত দুই বছরের মধ্যে গুজব মোকাবিলা করতে কয়েক দফায় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়েছে। 

কারণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তির তথ্য প্রকাশ পাচ্ছিল, যা সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গণবিজ্ঞপ্তি জাড়ি করে তার ব্যাখ্যা দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের তথ্য এখন থেকে আর প্রতি সপ্তাহে প্রকাশ করবে না। মাসিক ভিত্তিতে প্রকাশ হবে। 
আগে প্রতি সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রস ও নিট রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত। 

দেশের সার্বিক অর্থনীতির হালনাগাদ তথ্য নিয়ে প্রতি সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এটি এখনো করবে। তবে রিজার্ভের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করবে না। ৪ ও ১১ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনে ৩০ জুনের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ আগে প্রতি বুধবারের তথ্য বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হতো।

আন্তঃব্যাংকে ডলারের গড় দামে তথ্য আগের মতোই প্রতি সপ্তাহে প্রকাশ করা হবে। ১১ জুলাই ১০ জুলাইয়ের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এ তথ্য প্রতিদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হচ্ছে।

রেমিট্যান্স, আমদানি ও রপ্তানির তথ্য আগের মতো মাসিক ভিত্তিতে প্রকাশ করবে। তবে আমদানি ব্যয় ও এলসি খোলা, এলসির নিষ্পত্তির তথ্যের প্রকাশ বিলম্বিত করা হচ্ছে। হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করছে না।

চলতি হিসাবে ঘাটতির তথ্য আগের মতো মাসিক ভিত্তিতে প্রকাশ করছে। তবে তা হালনাগাদ তথ্য নয়। এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সূচকের এপ্রিল পর্যন্ত তথ্য প্রকাশ করেছে। অথচ বিভিন্ন সূত্র থেকে গণমাধ্যমে মে মাসের তথ্যও প্রকাশিত হয়েছে। রিজার্ভ মানি, ব্রড মানি, দেশীয় ঋণ, সরকারি ঋণ ও বেসরকারি ঋণএসব তথ্য আগের মতো প্রকাশ করলেও দেরিতে করছে। ফলে হালনাগাদ তথ্য মিলছে না।

এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন, বার্ষিক প্রতিবেদন, আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনও এখন দেরিতে প্রকাশ করছে।

দুটি প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ ও এপ্রিল-জুন) চলে গেছে। এরপরও অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের দেশের অর্থনীতির সার্বিক চিত্রের বিশ্লেষণধর্মী ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ত্রৈমাসিক’ প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ করা হয়নি। 

এখন যদি ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে, এতে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের জন্য যে পূর্বাভাস দেওয়া হবে, এর কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। কারণ, ইতোমধ্যে এপ্রিল-জুন প্রান্তিক চলে গেছে।

আর্থিক স্থিতিশীলতা মূল্যায়ন প্রতিবেদনও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এরপর আর প্রকাশ করা হয়নি। এ পর্যন্ত তিনটি প্রান্তিক চলে গেছে। এখন যদি অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, এর কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। 

ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের তথ্য প্রতিমাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেয়। প্রতি প্রান্তিকের তথ্য প্রান্তিক শেষ হওয়ার পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেগুলো সমন্বয় করে পরবর্তী দুই থেকে তিন সপ্তাহে চূড়ান্ত করে। 

এসব তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা না হলেও গণমাধ্যম নানা সূত্র থেকে সংগ্রহ করে প্রকাশ করত। এখনো একই প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য সমন্বয় করে চূড়ান্ত করে। কিন্তু গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে এসব তথ্য সংগ্রহ করে প্রকাশেও দেরি হচ্ছে।

আর্কাইভ