• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

নগদ টাকার টানাটানি, লাফিয়ে বাড়ছে সুদ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৪, ০৮:৩১ এএম

নগদ টাকার টানাটানি, লাফিয়ে বাড়ছে সুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অনিয়ম, দুর্নীতি এবং আস্থাহীনতায় তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে অন্তত এক ডজন ব্যাংক। এর মধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা খুবই নাজুক।

বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও এসব ব্যাংক প্রতিদিন একে অপরের থেকে নগদ টাকা ধার করে চলে। সবল ব্যাংক দুর্বল ব্যাংককে ধার দিয়ে থাকে। আন্তঃব্যাংকের ধারের এই পদ্ধতিতে ব্যাংকিং ভাষায় কলমানি মার্কেট বলা হয়। সে কলমানি মার্কেটে লাফিয়ে বাড়ছে সুদহার।

জানা গেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদহার বাড়ানোকে অন্যতম টুল হিসাবে ব্যবহার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে কারণেই চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) শুরু থেকেই সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা প্রত্যাহার করা হয়েছে। যার সরাসরি প্রভাব দ্রুত কলমানি মার্কেটেও পড়েছে।

আর সর্বশেষ কর্মদিবস গত বৃহস্পতিবার কলমানিতে লেনদেনে সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এই দিন লেনদেন হয় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা।

যদিও ২০২২ সালের জানুয়ারিতে কলমানির সুদহার ছিল ২ দশমিক ৭২ শতাংশ। সে হিসাবে দুই বছরের ব্যবধানে কলমানির গড় সুদহার সাড়ে ৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে, যা বিনিয়োগ, উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন ব্যাংকার এবং অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে কলমানির গড় সুদের হার ছিল ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর গত বছরের (২০২৩ সালে) ১১ জানুয়ারি এই সুদের হার ছিল ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

তার আগের বছরের (২০২২) একই তারিখে কলমানির গড় সুদের হার ছিল ২ দশমিক ৭২ শতাংশ। সে হিসাবে মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে কলমানির সুদের হার বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তবে বিদায়ি বছরের শেষ কর্মদিবসে সুদের হার ছিল ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংক খাতে বাড়তি টাকার চাহিদা তৈরি হয়েছে। কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য-সংকট রয়েছে। এসব কারণে কল মানিতে ধার নিয়ে নগদ টাকার চাহিদা মেটাচ্ছে অধিকাংশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে সুদের হার খানিকটা বেশি হলেও সেদিকে গুরুত্ব কম বলা যায়।’

সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক ধীর। আবার অধিকাংশ ব্যাংক ডলার কিনতে প্রচুর নগদ টাকা খরচ করেছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ছয় মাসে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে টাকা বাজার থেকে তুলে নিয়েছে।

এতে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়েছে। নগদ টাকার চাহিদা পূরণ করতে কলমানিতে ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অর্থ পাচার, ডলারের দাম বৃদ্ধিতে ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। তারল্য সংকটের মোকাবিলা করতে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে চড়া সুদের টাকা ধার নিচ্ছে।’

জানা গেছে, ব্যাংকগুলো দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে একে অন্যের কাছ থেকে একদিনের জন্য টাকা ধার নেয়। একে কলমানি বাজার বলা হয়। ব্যাংক যখন টাকা বা তারল্য সংকটে পড়ে কলমানিতে ধার নেয়।

সাধারণত নগদ টাকার চাহিদা বাড়লে কলমানির চাহিদা বাড়ে এবং তারল্য সংকট কমলে কলমানির চাহিদা কমে যায়। ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে কলমানি বাজার চালু হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জন্য সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। টাকার সরবরাহ কমাতে সুদের হার বাড়ানোর নীতি নিয়েছে, যা সরকারের ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদহারের ভিত্তিতে স্মার্ট সুদহার গত জুলাইয়ে চালু করেছে।

এর প্রভাব কলমানির সুদের ওপরও পড়েছে। পাশাপাশি গত ছয মাসে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রির মাধ্যমে বাজার থেকে নগদ টাকা তুলে নিয়েছে। এতে বাজারের টাকার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নগদ তারল্য সংকটে পড়েছে অনেক ব্যাংক। তাই বাধ্য হয়ে নগদ টাকার চাপ সামলাতে কলমানিতে ধার নিচ্ছে এসব ব্যাংক।

অর্থ ও বাণিজ্য সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ