• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ডিসেম্বরের মধ্যে মূলধন ঘাটতি কমানোর নির্দেশ

মন্দ ঋণের কবলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৩, ০৩:১৫ পিএম

মন্দ ঋণের কবলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান

ছবি: সংগ্রহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

 

মন্দ ঋণের কবলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানলুটপাট আর নানা অব্যবস্থাপনায় ধুঁকছে দেশের অধিকাংশ নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই)। এসব প্রতিষ্ঠিানে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, বিপরীতে ঋণ আদায়ের পরিমাণ আশানুরূপ নয়। তাই নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে খেলাপি বা মন্দ ঋণ। এ কারণে বড় অঙ্কের প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ) ঘাটতিতে পড়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

পাশাপাশি অধিকাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বড় আকারের মূলধন সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সময়ে খেলাপি ঋণ কমানোসহ নানা সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।  

রোববার (১৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইওকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে খেলাপি ঋণ কমানোর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আগামী সাত দিনের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ৩ মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। ফলে জুনের শেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা, যা এই খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। গত মার্চ মাস শেষে এনবিএফআইয়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা, যা ছিল ওই সময়ের মোট ঋণের ২৫ শতাংশ।

 

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের যোগসাজশে যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিতরণ করা হয়েছে ঋণ। এখন আদায় করতে পারছে না। আবার অনেক ঋণের বিপরীতে কোনো জামানতও নেই। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ তথ্য ভান্ডার বা সিআইবিতে গ্রাহকের তথ্য হালনাগাদ না থাকায় অনেক গ্রাহককে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। এসব কারণে অর্থ সংকটে প্রতিনিয়ত দুর্বল হচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে পারছে না, পড়েছে মূলধন সংকটে। কিছু প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। এমন অবস্থায় অস্তিত্বহীনতায় পড়েছে বেশ কিছু এনবিএফআই।

বৈঠক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেশি, প্রয়োজনীয় প্রভিশন ও মূলধন সংরক্ষণে সমস্যা হচ্ছে, তাদের আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সমস্যার সমাধান করতে বলা হয়েছে। তারা কীভাবে দ্রুত সময়ে খেলাপি ঋণ কমাবে ও মূলধন সংরক্ষণ করবে তার একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে এ পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, আজকের বৈঠকে ৭টি প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ কোম্পানির মূলধন সংরক্ষণ পরিকল্পনা জমা দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই নির্দেশনার আওতায় নিয়ে আসা হবে। 

যদিও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূলধন সংকট নেই বলে জানিয়েছেন এ মুখপাত্র।

এর আগে গত ২৭ আগস্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডিদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সভায় জানানো হয়, দেশের ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫টিতে খেলাপি ঋণ ৩২ শতাংশের বেশি। এ পরিস্থিতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়াকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা ঋণের ৮০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ। এর মধ্যে রয়েছে, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড ও ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। এর মধ্যে প্রথম চারটি প্রতিষ্ঠান আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের দখলে ছিল। আবার এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ টাকা পি কে হালদার তাঁর নামে-বেনামে তুলে নিয়েছেন, যা এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন ছাড় ও সুযোগ সুবিধা দিয়েও ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ কমাতে সফল হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। গত এপ্রিল-জুন সময়েই দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। ফলে জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকায়। এই খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা মোট ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।

 

সাজেদ/

আর্কাইভ