প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৩, ০২:৫৩ এএম
পণ্য বিক্রি করেন টিসিবির ডিলার অথচ কমিশন পান ওএমএস-এর ডিলার। কেন এবং কীভাবে চলছে বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় মিলে ভর্তুকিমূল্যে চাল বিক্রি কার্যক্রমে এমন হাত বদলের অপচয়? সে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এখান থেকে খুব সহজেই বছরে কমপক্ষে ৬০ কোটি টাকা বাঁচানো সম্ভব। এ বিষয়ে একমত ডিলাররাও।
টিসিবির পণ্য কিনতে এসে বরাবরই বরাদ্দ বাড়ানোর দাবির কথা বলে থাকেন ফ্যামিলি কার্ডধারীরা। তাদের স্বস্তি দিতে গেল জুলাই থেকে প্রতিটি কার্ডের বিপরীতে ৫ কেজি করে চাল বিক্রি করে আসছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যেখানে টিসিবি’র ডিলারের কাছে আঞ্চলিক গুদাম থেকে পণ্যটি পৌঁছে দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওএমএস`র ডিলার।
ওএমএস-এর এক কর্মী বলেন, আমাদের কাজ হলো গোডাউন থেকে পণ্যটা গাড়িতে লোড করে টিসিবির ডিলার পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া।
তিনি জানান, প্রতি কেজি পণ্য পরিবহনে তাদের কমিশন দুই টাকা।
দেখা যাক, এই চাল বিক্রিতে গেল তিন মাসে কিভাবে সরকারের বাড়তি ব্যয় হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। তার আগে জানা দরকার, সাধারণত কতো টাকা কমিশনে বিক্রি হয় ওএমএস-এর চাল। ওএমএস-এর এক কর্মী জানান, প্রতি কেজি পণ্যে ২ টাকা করে কমিশন পান তারা।
এই চালই যখন আবার বিক্রি হচ্ছে টিসিবি`র মাধ্যমে; তখন কমিশন বাড়ছে আরেক দফা।
ওএমএস-এর আরেক কর্মী বলেন, আমরা পৌঁছে দিয়ে কেজিতে ২ টাকা করে পাই। আর তারা বিক্রি করে ২ টাকা করে কমিশন পায়।
ওএমএস-এর মাধ্যমে যেখানে কেজিতে ২ টাকা কমিশন দিয়েই বিক্রি কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে; সেখানে কেনো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সেই চাল আলাদাভাবে বিক্রি করতে গিয়ে খরচ করতে হচ্ছে দ্বিগুণ? এমন প্রশ্নে উত্তর মিলছে একটাই, সিদ্ধান্ত সরকারের।
দুই মন্ত্রণালয় মিলে এই চাল বিক্রি করায় সরকারের অপচয়ের খাতা খুললে সরল অংকে দেখা যায়, ওএমএস চাল টিসিবিতে এসে হাত বদল হলেই প্রতিমাসে ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ডের বিপরীতে বাড়তি কমিশন গুনতে হচ্ছে ১০ কোটি টাকা। বছর শেষে যা দাঁড়ায় ১২০ কোটিতে। অথচ, হাত বদল না হলে এই পুরো টাকাই সাশ্রয় করা সম্ভব। অথবা ডিলারদের বাড়তি সুবিধা দিলেও বছরে অন্তত ৬০ কোটি টাকা কমবে সরকারি ব্যয়। এমন মত অর্থনীতিবিদদের।
অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, এখানে সবচেয়ে বড় ব্যাপারটি হলো অপচয়। একই সেবা দেয়ার জন্য দুইবার খরচ করার কোন মানে হয় না। দুই বার যে খরচটা হচ্ছে সেটা তো আসলে জনগণের করের টাকা থেকেই খরচ হচ্ছে। আমরা এখন খাদ্য মন্ত্রণালয়কে প্রতি কেজিতে ২ টাকা দিচ্ছি আবার টিসিবিকেও ২ টাকা দিচ্ছি। কিন্তু সেটা না করে আমরা যদি ২ টাকা এবং ১ টাকাও করতে পারি তাহলে খরচ অনেকটা কমে আসবে।
সহজ সরল এই হিসাবের বাইরে রয়েছে ওএমএস ও টিসিবি`র বিক্রি কার্যক্রমে অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতিতে ভরা অপচয়ের হিসাব।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/