প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৩, ০১:১৯ এএম
সাম্প্রতিক পদোন্নতি কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, বিদ্যমান পদোন্নতি নীতিমালা ভঙ্গ করে এমন কিছু কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে একটি বিশেষ শ্রেণিকে অবৈধভাবে সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিবছর ৩০ জুন এবং ৩১ ডিসেম্বরকে পদোন্নতির ভিত্তিকাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শূন্যপদ সাপেক্ষে প্রতি পদের বিপরীতে কমপক্ষে তিনজন প্রার্থীকে ধরে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হয়।
যদি প্রতি পদের বিপরীতে তিনজন প্রার্থী না পাওয়া যায়, তাহলে পরবর্তী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে থেকে একই আনুপাতিক হারে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করার কথা নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তাদের অভিযোগ, নীতিমালার এ বিষয়টি আমলে না নিয়ে শূন্যপদের বিপরীতে তিনজন প্রার্থী না থাকার পরও তাড়াহুড়ো করে একশ্রেণির কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। নীতিমালায় ৩০ জুন এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে `অথবা` এর পরিবর্তে `ও` শব্দটি ব্যবহার করা হলেও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে বছরে একবার পদোন্নতি দেয়া হয়। এতে চলতি বছর পদোন্নতির ভিত্তিকাল ৩০ জুলাই ধরা হলে পদের বিপরীতে প্রার্থীর অনুপাত ঠিক থাকে না। কিন্তু এর ভিত্তিকাল ডিসেম্বর ধরা হলে পদোন্নতির বিপরীতে প্রার্থীর অনুপাত অনেকটাই সামঞ্জস্যতা রক্ষা করতে সক্ষম হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কৃষি ব্যাংকের মুখ্য কর্মকর্তা পদধারী একজন সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, বর্তমানে যাদের পদোন্নতি দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তাদের পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই বললেই চলে। অথচ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এসব পদ পূরণ হয়ে গেলে যাদের চাকরির মেয়াদ চলতি বছর আগস্টে তিন বছর পার হয়েছে, তারা পদ না থাকার কারণে আগামী বছর বা এর বেশি সময় পদোন্নতি পাবে না। এ ছাড়া যারা ২০২০ সালের আগস্টে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, জুনকে ভিত্তিকাল ধরায় প্রথমত তারা নীতিমালা অনুসারে তিন বছর পূর্ণ হওয়ার পরও পদোন্নতি প্রক্রিয়ায়ই অংশ নিতে পারছেন না। অন্যদিকে অসম এই নিয়োগে সব কটি জ্যেষ্ঠ পদ পূর্ণ হয়ে গেলে বিনা পদোন্নতিতে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিতে হবে।
আরেক কর্মকর্তা সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, অবস্থা সাপেক্ষে জুন বা ডিসেম্বর দুটির যেকোনো একটি সময় পদোন্নতির ভিত্তিকাল ধরা যেতে পারে। ২০২০ সালেও ডিসেম্বর মাসকে ভিত্তিকাল ধরে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এবার পদের বিপরীতে প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা না থাকার পরও ডিসেম্বরের কাছাকাছি সময় এসে ভিত্তিকাল ধরা হচ্ছে জুন মাসকে। এ মাসকে ভিত্তিকাল ধরলে অনেক পদশূন্য থেকে যাবে। এতে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে। মাত্র কয়েক দিন অপেক্ষা করলেই একটি সুষ্ঠু পদোন্নতি কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হতো। কয়েক মাসের জন্য এমন তাড়াহুড়ো কর্মীদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করছে। ব্যাংকে কর্মরত অনেকেই এ কার্যক্রমকে অনৈতিক বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদবিন্যাস সংক্রান্ত নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বর্তমানে ব্যাংকটিতে মুখ্য কর্মকর্তা পদে শূন্যপদ আছে ৮১৯টি। নতুন পদোন্নতির কারণে মোট শূন্যপদ বেড়ে হবে ১ হাজার ২২টি। জুনকে ভিত্তিকাল ধরলে এত শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থীসংখ্যা মাত্র ৩০৬ জন, যা জনপ্রতি তিনজন প্রার্থী নীতিমালাকে লঙ্ঘন করে।
একই দশা জ্যেষ্ঠ মুখ্য কর্মকর্তা পদেও। মোট ২০৩টি শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থীসংখ্যা ৮১ জন। একইভাবে জুন মাসকে ভিত্তিকাল ধরে উপমহাব্যবস্থাপকের ১৫৯ শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থীসংখ্যা ১৬৭ জন এবং ডেপুটি মহাব্যবস্থাপকের ৫৯টি শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থীসংখ্যা ৬৫ জন। ডিসেম্বরের পরিবর্তে জুনকে ভিত্তিকাল ধরলে এসব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার হার নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অন্যদিকে এসব পদ পূরণ হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে যোগ্য প্রার্থীরা পদোন্নতি পাবেন না বলে অভিযোগ করেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা পদোন্নতি চাচ্ছি, এমন না। আমরা চাচ্ছি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার অন্তর্ভুক্ত হতে। জুনকে ভিত্তিকাল ধরায় আমাদের চাকরির মেয়াদ তিন বছর পূর্ণ হলেও যুক্তিপোযুক্ত কারণে এবং নীতিমালা অনুযায়ী আমরা পদোন্নতি পাব না। পরের বছর দেখা যাবে যারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদোন্নতি পেয়েছেন তাদের দিয়ে পদ পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় পরের বছরেও আমাদের পদোন্নতি আটকে যাবে। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বর মাসকে ভিত্তিকাল ধরলে নীতিমালার আনুপাতিক নিয়মও ঠিক থাকে এবং কর্মীদের প্রতি অবিচারও হয় না।
কেন উল্লিখিত পদের বিপরীতে কর্মকর্তা না থাকার পরও ডিসেম্বরের পরিবর্তে জুনকে ভিত্তিকাল ধরা হচ্ছে, সিটি নিউজ ঢাকার এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আলী খান বলেন, কয়েক বছর ধরে অর্থবছরের সময়কালকে ভিত্তি করে পদোন্নতি দেয়ার নীতিমালা চালু করা হয়েছে। এ জন্য মূলত জুন মাসকে ভিত্তিমাস ধরা হয়েছে। এখন পদোন্নতি পেছালে যাদের এরই মধ্যে পদোন্নতির সময় হয়ে গেছে তাদের প্রতি অবিচার করা হবে। অন্যদিকে বছর শেষে নির্বাচনী কাজের অনেক চাপ থাকার কারণে পদোন্নতি কার্যক্রমে সমস্যা হবে।
কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতি নীতিমালা-২০১২-এর ২ দশমিক ৩ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, উচ্চতর পদে পদোন্নতির জন্য জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতিযোগ্য শূন্যপদে ১ অনুপাত ৩ হারে পদোন্নতির বিবেচনা করতে হবে। তবে ১ অনুপাত ৩ হারে বিবেচনার পর পদোন্নতিযোগ্য শূন্যপদ পূরণে প্রয়োজনীয় সংখ্যক যোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী পাওয়া না গেলে সে ক্ষেত্রে পদোন্নতি বিবেচনাযোগ্য পরবর্তী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পুনরায় ১ অনুপাত ৩ হারে পদোন্নতির বিবেচনা করতে হবে।
নীতিমালা লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করলে শওকত আলী বলেন, সবসময় ১ অনুপাত ৩ হারে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়া সম্ভব নয়। আর যারা পদোন্নতির জন্য আবেদন করবেন তারা সবাই পদোন্নতি পাবেন এমন না। শূন্যপদ থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাবেন না। তখন প্রয়োজন সাপেক্ষে জ্যেষ্ঠতা অনুসারে বাকিদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হতে পারে।
নীতিমালার ১ দশমিক ২ অনুচ্ছেদে ভিত্তিকাল জুলাই এবং ডিসেম্বরের মধ্যে `অথবা` প্রত্যয়ের পরিবর্তে `ও` প্রত্যয় বছরে দুবার পদোন্নতির নির্দেশ করে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন,
মূলত একবারই পদোন্নতি দেয়ার নিয়ম। নীতিমালা অনেক পুরোনো হওয়ায় এখানে কিছুটা ভুল-ভ্রান্তি থাকতে পারে। তবে এর পর থেকে জুলাই মাসকে ভিত্তিকাল ধরেই বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সব পদোন্নতি হবে।
তবে পদোন্নতিপ্রত্যাশী কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বক্তব্য, জুন মাসের পদোন্নতির পরীক্ষা যদি অক্টোবরে হয়, তাহলে যাদের আগস্টে তিন বছর মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে তাদের এক বছরের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এর আগে ডিসেম্বরে যেসব পদোন্নতি দেয়া হয়েছে, সেগুলো কেন দেয়া হয়েছে সেই ব্যাখ্যাও দেয়া হয়নি। এসব কারণে বর্তমান পদোন্নতি কার্যক্রমকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং নীতিমালাবহির্ভূত বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/