প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩, ০১:০৯ এএম
ডলার সংকটের পরও গত সাড়ে আট মাসে রেকর্ড পরিমাণ ভোজ্যতেল-গুঁড়ো দুধ-মশলা, বিদেশি ফলসহ নিত্যপণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। বিশ্ববাজারে বুকিং রেট কম থাকার সুযোগে আমদানি বাড়লেও, নানা অজুহাতে দেশের বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এলসি খোলার জটিলতাকে পুঁজি করেই দাম বাড়িয়ে চলেছেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম বন্দর ও ব্যবসায়ীদের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি বছরের সাড়ে আট মাসে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বন্দরেই ৮ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা মূল্যের ৮ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন পাম অয়েল খালাস হয়েছে। একই সময়ে ৪ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা মূল্যের ৩ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল খালাস হয়। যা গত বছরের এ সময়ের তুলনায় ৪ শতাংশ বেশি।
১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা মূল্যের ৮৩ হাজার ৮২৭ মেট্রিক টন গুঁড়ো দুধ, ১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা মূল্যের ২ লাখ ১১ হাজার ১৫৫ মেট্রিক টন চিনি এবং ৪ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা মূল্যের ৫ লাখ ৮৩ হাজার মেট্রিক টন ডাল আমদানি করেছে। ফলে বাজারে এসব পণ্যের কোনো সংকট নেই বললেই চলে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপকমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, ‘বাজারে যেসব পণ্যের চাহিদা থাকে সেসব পণ্যের আমদানি বেশি হয়। ফলে বাজারে নিত্যপণ্যের চাহিদা থাকায় আমদানি আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে।
ডলার সংকটের এই অস্থির মুহূর্তে চাহিদার বিপরীতে আমদানি কয়েকগুণ বাড়লেও সেই অনুপাতে দেশের বাজারে দাম কমছে না। আমদানির ক্ষেত্রে এলসি খোলার অজুহাতকেই বড় করে দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অথচ এরইমধ্যে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আমদানি করা ২৫ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা মূল্যের ২৭ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন ওজনের ২২ ধরনের ভোগ্যপণ্য বন্দর থেকে খালাস শেষে বাজারে চলে গেছে।
খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমেদ বলেন, ‘আমরা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য আমদানি করতে পারতাম তাহলে নিশ্চয়ই পণ্যের দাম কমতো। আমাদের চাহিদা যতটুকু সে পরিমাণ পণ্য আমদানি করতে পারছি না।’
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘গত দুই মাস থেকে ব্যাংকে ব্যাংকে ধরনা দিতে হয়েছে এলসি খোলার জন্য। খাতুনগঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পণ্য না থাকলে পণ্য আসবে কোথা থেকে!’
তবে সাধারণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সীমিত আকারে যেসব ব্যাংক এলসি খোলার সুযোগ করে দিচ্ছে সেখানেও রয়ে গেছে বৈষম্যমূলক আচরণ। বিশেষ করে বড় বড় শিল্প গ্রুপ ডলারের কম মূল্যে এলসি খোলার সুযোগ পেলেও সাধারণ আমদানিকারকদের কাছ থেকে ডলার মূল্য বেশি রাখা হচ্ছে। আর বুকিং রেট কমে যাওয়ায় ভোগ্যপণ্য থেকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ রাজস্ব পেয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আলমগীর পারভেজ বলেন,ডলার রেটে বৈষম্য না থাকলে পণ্যের দাম আরও কমে আসতো। একেক ব্যাংক একেক রেটে ডলার দিচ্ছে। তাছাড়া সাধারণ আমদানিকারকদের কাছ থেকে রেট বেশি নেয়া হচ্ছে। এ বৈষম্যের ফলে পণ্যের দাম স্থিতিশীল হচ্ছে না।
বাংলাদেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার আমদানিনির্ভর হওয়ায় বছরে ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/