প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩, ০৫:১২ পিএম
বেশিরভাগ সবজির দামই যখন ঊর্ধ্বমুখী তখন শেষ ভরসা ছিল আলু। এখন সেই আলুও চলে গেছে নাগালের বাইরে। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামের লাগাম টানতে সম্প্রতি পেঁয়াজ, ডিম, ভোজ্যতেলসহ আলুর দাম বেঁধে দেয় সরকার। এরপরই বাধে বিপত্তি। সরকার দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পর চাহিদার ২৫ শতাংশ আলুও মিলছে না রংপুরের বাজারগুলোতে।
হিমাগারে পর্যাপ্ত আলু থাকলেও বেশি দামের আশায় কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে মজুতদাররা। তাই সরকার নির্ধারিত দামের আলু বিক্রি বন্ধ রেখেছেন তারা বলে অভিযোগ খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত এক মাসে খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে কেজিতে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় পৌঁছেছে; যা গেল এক যুগে সর্বোচ্চ।
সরেজমিনে রংপুর সিটি বাজার, ধাপ বাজার, লালবাগ বাজার ও স্টেশনবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না আলু। খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও আমরা সে দামে কিনতে পারছি না। তাই সরকারের নির্দেশনা মানার উপায় নেই আমাদের। আর ভোক্তা অধিদফতরের যে চাপ তাতে বেশি দামে কিনে আমাদের কম দামে বিক্রি করতে হবে। লোকসানের মুখ থেকে বাঁচতে সে জন্য আলু বেচাকেনা বন্ধ রাখছি।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকার হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম সর্বোচ্চ ২৭ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও মজুদদাররা সে দামে আলু ছাড়ছে না। বাধ্য হয়েই আমাদের আলু কিনতে হচ্ছে বেশি টাকায়। এরপর পরিবহন ও শ্রমিক খরচ তুলতে দর বাড়াতে হয়।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, হিমাগারগুলোতে আলুর পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও চাহিদার থেকে কম আলু বের করছে ব্যবসায়ীরা। মজুদদারদের সিন্ডিকেট না ধরে বাজারে আমাদের জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিদফতর। তাই এখন বাধ্য হয়েই দেশি জাতের আলু বাদে অ্যাসটরিক, গ্র্যানুলা, কার্ডিনালসহ অন্যান্য জাতের আলু বিক্রি বন্ধ রেখেছি আমরা।
কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, প্রতি কেজি আলুতে উৎপাদন খরচ ৯.৫০ টাকা, হিমাগার ভাড়া ৬ টাকা, বস্তার মূল্য ১.৪০ টাকা, পরিবহন, লোডিং আনলোডিং এক টাকা এছাড়া ওজন,ব্যাংক ঋণের সুদ ও অন্যান্য ব্যয় ১.৬০ টাকা ধরে মোট খরচ ১৯.৫০ টাকা। যদিও মৌসুমের শেষে এসে সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।
জাতীয় কৃষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, মৌসুমের শুরুতে আলু ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষকরা। সেই আলু চার মাসে কয়েক হাত ঘুরে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।
সরকার মৌসুমের শুরু থেকে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করলে এই সমস্যার সৃষ্টি হতো না। একইসঙ্গে শুধু ভোক্তা অধিদফতরের ওপর নির্ভরশীল না থেকে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনসহ সরকারের অন্য দফতরগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজে লাগানো গেলে আলুর এই সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব বলেও জানান তিনি।
তবে সম্প্রতি সরকার আলুর দাম বেঁধে দেয়ার পরই সিন্ডিকেট ভাঙতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে ভোক্তা অধিদফতর। চলতি মাসে আলুর অবৈধ মজুদসহ বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালিয়ে ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু তারপরও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমছে না।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আজহারুল ইসলাম জানান, সরকারের বেঁধে দেয়া দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠে কাজ করছি আমরা। রংপুরের হিমাগারগুলোতে মজুমদারের সতর্ক করে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/