• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

৪ কোটি ডিমে কতদিন চলবে?

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩, ০১:১৮ এএম

৪ কোটি ডিমে কতদিন চলবে?

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশের বাজারে ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় তা সামাল দিতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এদিকে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে দৈনিক ডিমের চাহিদা চার কোটি। অর্থাৎ আমদানি করা ডিমে একদিন চলবে।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছেন,

গতমাসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা ধরে খুচরা পর্যায়ে প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেন। কিন্তু জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদতফর বিভিন্ন সময়ের বাজার অভিযানে দেখতে পেয়েছে খুচরা পর্যায়ে ডিম এ দামে বিক্রি হচ্ছে না। তাই বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সিদ্ধান্তে আমরা কিছু ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি।

চারটি প্রতিষ্ঠানকে চার কোটি ডিম আমদানি অনুমতি দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্য সচিব বলেন, প্রতিটি কোম্পানি এক কোটি করে ডিম আমদানি করতে পারবে।

ডিম আমদানির অনুমতি পাওয়া চারটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- মেসার্স মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্স, টাইগার ট্রেডিং এবং অর্নব ট্রেডিং লিমিটেড।

তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন, বাংলাদেশে দৈনিক চার কোটি ডিম প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আমরা একদিনের ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি। এটি বাজারে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে কিংবা আমাদের খামারিরা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছি না।

আমদানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্তটি অবস্থা বুঝেই নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। 

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট মুরগির খামারের সংখ্যা ২ লাখ ৫ হাজার ২৩১টি।  এর মধ্যে নিবন্ধিত খামারের সংখ্যা ৮৫ হাজার ২২৭টি। 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনা মহামারির আগে দেশে দৈনিক পাঁচ কোটি পিস ডিম উৎপাদন হতো। করোনার সময়ে বেশকিছু মুরগির খামার বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে ডিমের উৎপাদন চার  কোটি পিসের নিচে নেমে যায়। 

এদিকে এ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অনেকেই বলছেন, ডিমের দৈনিক চাহিদা জানা নেই। তবে ধারণা করা হয়, এ সংখ্যা চার কোটির মতো। একদিনের চাহিদার সমান ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত হলেও; একদিনেই ডিম বাজারে চলে আসবে না। তবে আমদানি করা ডিম বাজারে সরবরাহ বাড়াবে এবং অর্থনীতির সূত্র অনুযায়ী দাম কমিয়ে আনবে।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, সরকার পরীক্ষামূলকভাবে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। প্রয়োজন হলে আরও ডিম আমদানি করবে।

তবে এটিকে ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন সুমন হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘ডিম আমদানি না করে পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা আমদানি করা যেতে পারে। এতে উৎপাদন খরচ কমবে, ডিমের দামও কমবে।’

ডিম আনার বিষয়ে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, একটি কোম্পানি বলেছে তারা ভারত থেকে ডিম আনবে। বাকি তিনটির বিষয়ে আমার খেয়াল নেই। তবে তারা যে কোনো উৎস থেকে ডিম আনতে পারবে। তারা যেখানে দাম কম পাবে, কিংবা যেখান থেকে দ্রুত আনতে পারবে, সেখান থেকেই ডিম আমদানি করতে পারবে।

ডিম আমদানির শর্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে কোনো শর্ত নেই। সুবিধামতো আনবে, যাতে ভোক্তারা কম দামে পান। তবে বিক্রির ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যে দাম বেঁধে দিয়েছে, সেই দামেই বিক্রি করতে হবে। অর্থাৎ ১২ টাকায় ডিম বিক্রি করতে হবে।’

তবে যেসব দেশে অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা কিংবা অন্য সমস্যা আছে, সেসব দেশ থেকে ডিম আমদানি করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন সিনিয়র সচিব। তিনি বলেন, আমরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করেছি। সেই ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ বাজারকে আমরা স্থিতিশীল করতে চাচ্ছি।

যখন কোনো পণ্যের আমদানি বন্ধ থাকে, তখন সেটি একটা সমস্যা হয়ে যায় বলেও মন্তব্য করেন তপন কান্তি ঘোষ। তিনি আরও বলেন, অবশ্যই আমরা দেশের যুবসমাজের কর্মসংস্থান দেখবো। দেশের মানুষের আর্থিক উন্নয়নে এই শিল্প দেশে গড়ে উঠুক, তা সবাই চায়। সরকারেরও মূল লক্ষ্য এটি। কিন্তু যখন এই সুযোগে বাজার থেকে কেউ বেশি মূল্য নিতে চায় বা ভোক্তাদের জন্য নিত্যপণ্য কেনা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়, তখন আমদানির কথা ভাবতে হবে। আমি মূলত বোঝাতে চাচ্ছি, আমরা আরও আমদানির অনুমতি দেব কি না, তা বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। আমরা প্রতিনিয়তই বাজার মনিটরিং করছি। দরকার হলে আরও আমদানি অনুমতি দেব, দরকার না হলে নাও দিতে পারি। দেশের উৎপাদিত ডিমকে প্রাধান্য দিতে চাই।

আমদানি করা ডিমের দামের বিষয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, দাম আসলে অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে, এখন যদি অনেক বেশি আমদানি করতে দেয়া হয়, তাহলে দাম কমতেও পারে। আর দাম কম না হলে যিনি আমদানি করবেন, তিনি তা করবেন না। কারণ তাকে তো ডিম বাজারে বিক্রি করতে হবে। আমরা যদি মনে করি, ডিম নির্ধারিত দামের নিচে বিক্রি করা যাচ্ছে না, তাহলে আরও আমদানির অনুমোদন দেয়া লাগতে পারে।

 

সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

 

জেকেএস/

আর্কাইভ