• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রথম চার্জিং স্টেশন ঢাকায়

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩, ০১:৩৫ এএম

বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রথম চার্জিং স্টেশন ঢাকায়

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিশ্বের গাড়ির জগতের ক্রেজ এখন বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি)। আকর্ষণীয় ডিজাইন আর নানা অত্যাধুনিক ফিচার থাকায় গাড়িগুলো নজর কাড়ে সহজেই। একটি দুটি করে বাংলাদেশের রাস্তায়ও এখন চলছে নানা ব্রান্ডের শতাধিক বৈদ্যুতিক গাড়ি। তবে চার্জ দেয়ার সমস্যার কারণে দেশে নানা বিপত্তির মুখে পড়তে হচ্ছে এইসব গাড়ি ব্যবহারকারীদের।

পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়ায় উন্নত বিশ্বের দেশগলোতে এরমধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে বৈদ্যুতিক গাড়ি। তবে বাংলাদেশের রাস্তায় তেমন চোখে পড়ে না এসব গাড়ি। এর অনেকগুলো কারণ থাকলেও অন্যতম কারণ ইভির প্রয়োজনীয় চার্জিং স্টেশনের অভাব। এই সমস্যা সমাধানে দেশে প্রথমবারের মতো চার্জিং স্টেশনের সুবিধা নিয়ে এসেছে ‘এখন চার্জ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশে জার্মানির অটোমোবাইল ব্রান্ড অডির ডিস্ট্রিবিউটর প্রোগ্রেস মোটরস ও সফটওয়ার সল্যুশন কোম্পানি সেন্টিনেল টেকনোলজির যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছে ‘এখন চার্জ’-এর কার্যক্রম। তাদের উদ্দেশ্য পুরো বাংলাদেশকে বাণিজ্যিক ইভি চার্জিংয়ের সুবিধার আওতায় আনা। পরীক্ষামূলক প্রথম চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে।

অনেক দাম দিয়ে কিনলেও শখের এসব ইভি চার্জ দেয়ার ক্ষেত্রে বিপত্তির সম্মুখীন হন ব্যবহারকারীরা। বাণিজ্যিক চার্জিং স্টেশন না থাকায় ব্যক্তিগতভাবে গাড়ির ব্যাটারিকে চার্জ দিতে হয় ব্যবহারকারীদের। এতে সময় লাগে অনেক বেশি। ফলে ঢাকা থেকে দূরের জেলাগুলোতে ইভি নিয়ে যেতে বিপত্তির মুখে পড়েন ব্যবহারকারীরা। পর্যাপ্ত চার্জিং স্টেশন থাকলে দেশে ইভি ব্যবহারে আরও উৎসাহিত হবেন বলে মনে করছেন ‘এখন চার্জ’-এর উদ্যোক্তারা।

প্রোগ্রেস মোটরস ইমপোর্ট লিমিটেডের সিইও ফজলে সামাদ বলেন, আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারকারীরা দূরে কোথাও যেতে চান, তাহলে তারা কিভাবে গাড়ি চার্জ করবেন? কাজেই এখন চার্জের স্ট্র্যাটেজি হলো তারা বেশ কিছু হাইওয়েতে কিছু হাইস্পিড চার্জার বাসাবেন। যেখানে ৩০ মিনিট থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে গাড়ি চার্জ দেয়া যাবে। ফলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া বা কক্সবাজার যাওয়া কিংবা খুলনা বা সিলেট যাওয়া সহজ হয়ে যাবে।  

বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ হওয়ার পুরো বিষয়টি ক্লাউড বেইজ সফটওয়ার নিয়ন্ত্রিত। গাড়ি কিভাবে কতখানি চার্জ হলো, চার্জ দিতে কত টাকা খরচ হলো, গ্রাহক তার মোবাইল থেকেই দেখতে পারবেন পুরো বিষয়টি।

‘এখন চার্জ’-এর প্রোডাক্ট লিড শাহ ওমর সাকিব বলেন, ‘এখন চার্জের মোবাইল অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবহারকারীকে একটি আরএফআইডি কার্ড দেই। যেটি ব্যবহার করে ব্যবহারকারী তার বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং এক্টিভেট করতে পারবেন। তাছাড়া ব্যবহারকারী ‘এখন চার্জ’-এর অ্যাপের মাধ্যমে চার্জার নিয়ন্ত্রণ করতে এবং দেখতে পারবেন।’

ইউরোপিয়ান স্টান্ডার্ডের কম্বাইন্ড চার্জিং সিস্টেম বা সিসিএসটু সুবিধা থাকা যে কোনো ব্রান্ডের বৈদ্যুতিক গাড়িকে রিচার্জ করা সম্ভব হবে ‘এখন চার্জ’-এর চার্জিং স্টেশনে। পাশাপাশি চার্জ করা যাবে জাপানি চার্জিং সিস্টেমের ইভিকেও।

দেশের রাস্তায় চলা অডির ই-ট্রন মডেলের বৈদ্যুতিক গাড়িটি একবার ফুল চার্জ করা হলে চলতে পারে ২৮০ কিলোমিটার। ‘এখন চার্জ’-এ বসানো ৬০ কিলোওয়াট ক্ষমতার চার্জার গাড়িটিকে ফুল চার্জ দিতে সময় নেয় মাত্র ৪০ মিনিট। ভবিষ্যতে আরও ক্ষমতাসম্পন্ন চার্জার বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে ‘এখন চার্জ’-এর। এতে গাড়ির ফুল চার্জিং সম্পন্ন হবে মাত্র ২০ মিনিটে।

‘এখন চার্জ’-এর সুবিধা নিতে ইভি ব্যবহারকারীদের প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, এতে এই অ্যাপে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট তৈরি হবে। ‘এখন চার্জ’-এর তরফে গ্রাহকদের দেয়া হবে একটি আরএফআইডি কার্ড, যার কার্যক্রম অনেকটা ক্রেডিট কার্ডের মতই।

চার্জিং মেশিনের চার্জারটি যখন গাড়িতে লাগানো হবে, তখন মেশিনটি অথেনটিকেশন পারমিশন চাইবে। সেক্ষেত্রে মেশিনে আরএফআইডি কার্ড স্ক্রাচ করে অথবা অ্যাকাউন্টের অ্যাপের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা যাবে। এরপর গাড়ি চার্জ হওয়া শুরু হবে। পেমেন্ট দেয়া যাবে অনলাইনে।

ইভি চার্জের খরচ এখনও চূড়ান্ত করেনি ‘এখন চার্জ’ কতৃপক্ষ। চার্জের ট্যারিফ কত হবে এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে এখনও আলোচনা চলছে তাদের। তবে তেজগাঁওয়ের এই চার্জিং স্টেশনে প্রোগ্রেস মোটরসের অডি ইভি গাড়ির গ্রাহকরা পাচ্ছেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চার্জ করানোর সুযোগ। তবে অন্যান্য ব্রান্ডের ইভিকে সার্ভিস চার্জ হিসেবে দিতে হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা।

ট্যারিফ চূড়ান্ত হলেও ‘এখন চার্জ’-এর চার্জিং স্টেশনে কিলোমিটারপ্রতি জ্বালানি খরচ হবে প্রচলিত তেল, সিএনজি কিংবা এলপিজির তুলনায় অনেক কম। ‘এখন চার্জ’-এর প্রোডাক্ট লিড শাহ ওমর সাকিব বলেন, ‘পেট্রোলচালিত গাড়ি হাইব্রিড হোক বা শুধু পেট্রোলই হোক, সেক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ব্যয় আসে প্রতি হাজার কিলোমিটারে ১১ হাজার টাকা থেকে ১৩ হাজার টাকা। আর যদি সেটি নন হাইব্রিড হয়, সেক্ষেত্রে সেটির ব্যয় বেড়ে প্রতি হাজার কিলোমিটারের জন্য ১৬ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে আমরা ‘এখন চার্জ’-এর জন্য যে প্রস্তাবনা তৈরি করেছি, সেখানে প্রতি হাজার কিলোমিটারে ব্যয় পড়বে মাত্র ৫ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকার মতো।’

ফ্রাঞ্চাইজির মাধ্যমে দেশের যে কোনো স্থানে ‘এখন চার্জ’-এর সঙ্গে যৌথভাবে চার্জিং স্টেশন তৈরি করতে পারবেন অন্য উদ্যোক্তারা। সেক্ষেত্রে চার্জিং স্টেশন স্থাপন ও সার্ভিসিং এর সব সুবিধা দেবে ‘এখন চার্জ’।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে কার্বন নিঃসরণ ঠেকাতে তেল ও গ্যাসচালিত গাড়ির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ২০৩৫ সাল থেকে এই ধরনের সব গাড়ি বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। চীনসহ অন্যান্য দেশও নিচ্ছে একই ধরনের উদ্যোগ। ফলে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়ি।

যুগের এই চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে হবে বাংলাদেশকেও। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যখন দেশের আনাচে কানাচে চোখে পড়বে বৈদ্যুতিক গাড়ির  চার্জিং স্টেশন।

 

সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

 

জেকেএস/

অর্থ ও বাণিজ্য সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ