প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩, ০৭:০৩ পিএম
লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে বেড়েই চলেছে মাছের দাম। আর ওঠানামার মধ্যে থাকা সবজির বাজারও সপ্তাহ ব্যবধানে ঊর্ধ্বমুখী। এতে দিশেহারা ভোক্তারা। তবে স্থিতিশীল রয়েছে মাংসের বাজার।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ, জিনজিরা ও আগানগর এবং রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও পুরান ঢাকার শ্যামবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
বাজারঘুরে দেখা যায়, বাজারে ইলিশ ছাড়া প্রায় সব মাছেরই দাম বাড়তি। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে নদীর মাছের দাম।
বাজারে প্রতিকেজি দেশি মাগুর ১ হাজার ৫০০ টাকা, দেশি শিং ১ হাজার ৬০০ টাকা ও শোল ১ হাজার টাকা ও নদীর পাঙাশ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতিকেজি টেংরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, রুই ৩৯০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা ৭০০ থেকে ৮৫০, চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, কোরাল ৮০০ টাকা ও তেলাপিয়া ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারা জানান, বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি। যা দিন দিন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ফারুক হাসান নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবে মাছের দাম একটু বেশিই চড়া। গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে মাছ কিনতে হচ্ছে।
আরেক ক্রেতা আকিব বলেন, বাজারে দেশি মাছের দাম আকাশছোঁয়া। প্রতিকেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এখনই বাজারের লাগাম টেনে ধরা দরকার।
আর বিক্রেতারদের দাবি, বাজারে দেশি মাছের সরবরাহ কম। পাশাপাশি ঘেরের মাছগুলোও পর্যাপ্ত পরিমাণে আসছে না। এতে দাম কিছুটা বাড়তি।
আজিজুল নামে এক বিক্রেতা বলেন, ‘সপ্তাহ ব্যবধানে মাছের দাম ৩০ টাকা বেড়েছে। তবে সরবরাহ বাড়লে দাম কমতে শুরু করবে।’
এদিকে ইলিশের বাজারে কিছুটা স্বস্তির খবর শোনালেন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতারা। তারা জানান, কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে ইলিশের দাম।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা, ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, ৮শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা ও ৫শ’ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ানবাজারে শুক্রবারের ইলিশের দাম
ইলিশ মাছের ওজন দাম
দেড় কেজি ১৮০০ টাকা
এক কেজি ১৩০০-১৪০০ টাকা
৮০০-৯০০ গ্রাম ১২০০-১৩০০ টাকা
৫০০-৬০০ গ্রাম ১০০০ টাকা
বাজারে ঊর্ধ্বমুখী সবজির দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে প্রতিকেজিতে সবজির দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শিম ২০০ টাকা, শষা ৫০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা কহি ৬০ টাকা ও বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতিকেজি মুলা ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ঢেড়স ৬০ টাকা, কচুর মুখী ৮০ টাকা, ও টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আর প্রতিপিস লাউ ৬০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
ক্রেতারা জানান, শুক্রবার এলেই বাজার চড়া হয়ে যায়। সরবরাহ সংকটের অজুহাত দিয়ে খেয়ালখুশি মতো দাম বাড়ায় বিক্রেতারা।
সাইফুল নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি নতুন কিছু না। প্রতি সপ্তাহেই দাম বাড়ে। ১ টাকা দাম কমলে; দাম বাড়ে ৫ টাকা।
আর বিক্রেতাদের দাবি, আড়তগুলো থেকে বাজারে চাহিদামতো সবজি সরবরাহ হচ্ছে না। এতে সরবরাহ ঘাটতিতে দাম কিছুটা বাড়ছে।
তবে কমেছে পেঁপে ও কাঁচা মরিচের দাম। প্রতিকেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। আর খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা ও পাইকারি পর্যায়ে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে দেশি ও ভারতীয় মরিচের আমদানি বেড়েছে। এতে দাম কমতির দিকে। সামনে দাম আরও কমবে।
বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে মাংসের দাম। বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। এ ছাড়া লাল লেয়ার ৩২০ থেকে ৩৫০ ও সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে স্বাভাবিক রয়েছে সরবরাহ পরিস্থিতি। ফলে নতুন করে বাড়েনি মুরগির দাম। কেরানীগঞ্জের জিনজিরা বাজারের বিক্রেতা ইমন বলেন, বাজারে মুরগির পর্যাপ্ত যোগান রয়েছে। পাইকারিতেও দাম বাড়েনি। তাই খুচরা বাজারেও দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
স্থিতিশীল রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দামও। বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। আর প্রতিকেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়।
কয়েক সপ্তাহ ধরে অস্থির ডিমের বাজারও রয়েছে স্থিতিশীল। নতুন করে বাড়েনি দাম। বাজারভেদে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪৪ থেকে ১৫০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৪ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি ডজন হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়।
এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে নিম্নমুখী দেশি পেঁয়াজ ও রসুনের দাম। তবে বেড়েছে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা, আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।
এ ছাড়া প্রতিকেজি দেশি রসুন ২৪০ টাকা ও আমদানিকৃত রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। আর মানভেদে প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৮০ টাকায়।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতা স্বপন জানান, আমদানি কমেছে ভারতীয় পেঁয়াজের। এতে বাড়তে শুরু করেছে দাম। পাইকারিতে প্রতি ৫ কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের মের্সাস আনোয়ার বাণিজ্যালয়ের মুন্না বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে শুল্ক বাড়িয়েছে। এতে আমদানি কমায় ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।’
বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে চালের দাম। বাজারে প্রতিকেজি আটাশ ৪৭ থেকে ৫০ টাকা, মিনিকেট ৬০ থেকে ৬২ টাকা, জিরাশাইল ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল ৬৫ টাকা ও পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়।
বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে চালের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। চালের দাম বাড়ার আশঙ্কা কম। কারওয়ান বাজারের হাজী ইসমাইল অ্যান্ড সন্সের মালিক মো. মহিউদ্দিন জানান, দেশে চালের যথেষ্ট মজুত রয়েছে। সিন্ডিকেট না হলে চালের দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
বাজারে কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে মসলার দাম। প্রতিকেজি জিরা ১ হাজার ১০০ টাকা, গোল মরিচ ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, শুকনা মরিচ ৪০০ টাকা, এলাচ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, দারুচিনি ৪০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৫০০, কাঠবাদাম ৭৯০ টাকা, কাজুবাদাম ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে আটা ও ময়দার দামও। প্রতিকেজি খোলা আটা ৪৫ টাকা ও প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। প্রতিকেজি ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা। আর নতুন দাম নির্ধারণের পর চিনি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।
তবে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৪ টাকায় বিক্রি হলেও খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, এরই মধ্যে নতুন দামের প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল বাজারে এসেছে। বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত দামেই। তবে খোলা সয়াবিন তেল মিল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ না হওয়ায় দাম বাড়তি।
এর আগে গত মাসের ১৩ আগস্ট প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৫ টাকা কমিয়ে ১৭৪ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে ১৫৪ টাকা এবং ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ২৩ টাকা কমিয়ে ৮৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
আর গত মাসের ১৩ আগস্ট প্রতিকেজি পরিশোধিত খোলা চিনি ১৩৫ টাকা থেকে ৫ টাকা কমিয়ে ১৩০ টাকা এবং প্রতিকেজি পরিশোধিত প্যাকেট চিনি ১৪০ টাকা থেকে ৫ টাকা কমিয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
নিত্যপণ্যের এ অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।
আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/