প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৩, ০৭:৩১ পিএম
অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে বাসমতি ছাড়া অন্য সব ধরনের চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। এর রেশ না কাটতেই নতুন করে আরেকটি নিত্যপণ্য, চিনি রফতানির ওপর এমন নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে উদ্বিগ্ন খাত বিশ্লেষকরা।
সোমবার (৭ আগস্ট) ব্লুমবার্গের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনি সরবরাহ সংকটের কারণে ভারতের চিনি রপ্তানির ওপর বিশ্ব ক্রমশ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিন্তু দেশটিতে অসম বৃষ্টিপাতে ব্যাপক কৃষি অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে পর্যাপ্ত চিনি উৎপাদন নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে গত মৌসুমের মতো চলতি বছরের অক্টোবরে শুরু হয়ে মৌসুমেও চিনির উৎপাদন কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চিনির উৎপাদন কমে গেলে সহসাই দেশটির রপ্তানি সক্ষমতাও কমে যেতে পারে। তাই চিনি রফতানি কড়াকড়ি করার মতো সিদ্ধান্ত আসতে পারে, এমনটাই আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
কেননা, ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত ও দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য গম ও বাসমতি ছাড়া সব ধরনের চাল রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। যার প্রভাব পড়েছে বিশ্বের খাদ্য বাজারে। বৈরি আবহাওয়া আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এরইমধ্যে বাড়তি থাকা খাদ্যমূল্য এ সিদ্ধান্তের প্রভাবে আরও বেড়ে গেছে।
এ বিষয়ে ট্রপিক্যাল রিসার্চ সার্ভিসেসের চিনি ও ইথানলের প্রধান হেনরিক আকামাইন বলেছেন,
এটি স্পষ্ট যে ভারত সরকার দেশের বাজারে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে প্রয়োজনে সরকার হয়তো চিনির ক্ষেত্রে একই পদক্ষেপ নিতে পারে।
মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকের আখ উৎপাদনকারী অঞ্চলে জুন মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি উল্লেখ করে ইন্ডিয়ান সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসএমএ) সভাপতি আদিত্য ঝুনঝুনওয়ালার বলেন, এতে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তাই গ্রুপটি ধারণা করছে, ২০২৩-২৪ সালে চিনির উৎপাদন দাঁড়াবে ৩১ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন। যা আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কম।
তবুও, এ পরিমাণ চিনি দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে মনে করেন ঝুনঝুনওয়ালা। তবে এ পরিমাণ উৎপাদন স্তর নিয়ে দেশের বাইরে চিনি রফাতানি সম্ভব নয় বলে মনে করেন স্টোনএক্সের চিনি ও ইথানলের প্রধান ব্রুনো লিমা।
এর আগেও ভারত চিনি রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। ২০২২-২৩ মৌসুমে ৬ দশমিক ১ মিলিয়ন টন চিনি রফতানি অনুমতি দিয়েছিল সরকার। যা তার আগের মৌসুমে ছিল ১১ মিলিয়ন টন।
এক্ষেত্রে আকামাইন আর লিমাসহ অন্যান্য বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ২০২৩-২৪ মৌসুমে সরকার হয়তো মাত্র ২ মিলিয়ন টন থেকে ৩ মিলিয়ন টন চিনি রপ্তানির অনুমতি দিবে। অথবা চিনি রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে। এতে বিশ্ববাজারে চিনির দাম লাফিয়ে বাড়তে পারে।
ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এই বছর চিনির দাম প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। এর দাম চলতি বছরের এপ্রিলে পাউন্ডপ্রতি সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ৮৩ সেন্টে উঠে যায় যা ২০১১ সালের পর সর্বোচ্চ। যদিও বর্তমানে চিনির দাম এর থেকে কম রয়েছে।
তবে থাত সংশ্লিষ্টরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, আল নিনোর প্রভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। ফলে গরম ও শুস্ক পরিস্থিতির কারণে ফসল উৎপাদন ক্ষতির মুখে পড়বে। এতে থাইল্যান্ডের চিনি উৎপাদনও কমে যেতে পারে।
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা ও মধ্য আমেরিকায় মতো অন্যান্য অঞ্চলেও চিনি কম উৎপাদিত হয়েছে। এখন এশিয়ার দেশগুলোয় চিনির উৎপাদন কমে গেলে দাম লাফিয়ে বাড়বে। আকামাইনের ধারণা, আসন্ন মৌসুমে প্রতি পাউন্ড চিনির দাম ঠেকবে ২৫ সেন্ট থেকে ২৭ দশমিক ৫ সেন্টে। শুক্রবার (৪ আগস্ট) আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি পাউন্ড চিনি ২৩ দশমিক ৬৯ সেন্টে বিক্রি হয়েছে।
এদিকে আইএসএমএ বলছে, আসন্ন ২০২৩-২৪ মৌসুমে চিনি রপ্তানি নিয়ে ভারত সরকারের বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ অক্টোবরে ফসল কাটা শুরু হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফসল উৎপাদন হবে।
উল্লেখ, বাংলাদেশে বছরে ১৮ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন চিনির চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ টনের মতো চিনি দেশেই উৎপাদিত হয়। আর বাকি চিনির চাহিদা ভারত, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা থেকে আমদানি করে মেটানো হয়।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/