প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৩, ০২:৫৫ এএম
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গৃহস্থালি এবং শিল্পের জন্য সুলভ মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে উদ্যোক্তাদের পরিকল্পিত শিল্পনগরীতে কলকারখানা ও শিল্প স্থাপন করতে হবে।
শনিবার (৫ জুলাই) বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ’বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার: বঙ্গবন্ধুর দর্শন’ শীর্ষক এক সেমিনারে একথা বলেন তিনি।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের নির্বাচনে বর্তমান সরকারের ইশতেহার ছিল, ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া। সেই লক্ষ্য অর্জনের পর, এখন সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গৃহস্থালি এবং শিল্পের জন্য সুলভ মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে।
যত্রতত্র শিল্প স্থাপনের কারণে দেশে গ্যাসের প্রচুর অপব্যবহার হচ্ছে উল্লেখ করে উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন,আপনারা সরকারের পরিকল্পিত শিল্পনগরীতে কলকারখানা স্থাপন করুন, সেখানে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের দায়িত্ব আমাদের।
তিনি আরও বলেন, শিল্পে বিদ্যমান জ্বালানি সংকট থেকে দ্রুত উত্তরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বহুমুখী জ্বালানি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যার আওতায় রয়েছে নতুন নতুন কূপ খনন, বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন, তেল আমদানির জন্য সিঙ্গেল মুরিং পাইপলাইন স্থাপনসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধি।
দেশে আগে তেল সংরক্ষণ সক্ষমতা মাত্র ৩০ দিনের থাকলেও বর্তমানে সেটি বাড়িয়ে ৪৫ দিনে উন্নীত করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশের তেল সংরক্ষণ সক্ষমতা ৯০ দিন বা ৩ মাসে উন্নীত করা হবে।
বায়োগ্যাস উৎপাদনে বাংলাদেশের বড় সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বেসরকারি খাত বায়োগ্যাস উৎপাদনে আগ্রহ দেখালে সব ধরনের সহযোগিতা করবে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)।
এর আগে সেমিনারে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, চলমান বৈশ্বিক সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জ্বালানি খাত। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ এটি। জ্বালানির দাম বাড়ায় বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা।
এমন পরিস্থিতিতে, জ্বালানির আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয় গ্যাস, কয়লা ও খনিজ সম্পদ উত্তোলনে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সরকারের প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছর নাগাদ প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াবে দৈনিক ৫ হাজার ৭৯ মিলিয়ন ঘনফুট। যা বর্তমান চাহিদার চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ বেশি। দেশে গ্যাসের মজুদ কমে আসা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের সঙ্গে এর বর্ধিত চাহিদা মেটানোর জন্য এরইমধ্যে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে।
তবে বর্তমানের মতো শুধু আমদানিনির্ভর থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ শুধুমাত্র জ্বালানি আমদানিতে ২৪ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বলে জানান জসিম উদ্দিন। এ অবস্থায় তেল ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে বিকল্প হিসেবে কয়লা এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারকে তৎপর হতে হবে।
তিনি আরও বলেন,বিভিন্ন উৎস বিশেষ করে জল এবং স্থলভাগ থেকে অভ্যান্তরীণ জ্বালানি প্রাপ্তির সম্ভাব্যতা বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এবং কম্বোডিয়ার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, রংপুরে যেসব কয়লা খনির সন্ধান মিলেছে, সেগুলো থেকে কয়লা উত্তোলনে সরকারকে রাজনৈতিকভাবে সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে খনি সংলগ্ন এলাকার জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ব্যবস্থা করে সেখানে বৃহৎ আকারে কয়লা উত্তোলনে যেতে হবে। এতে করে দেশের জ্বালানি সংকটের চাপ কিছুটা কমবে।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ঈমাম, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামির সাত্তার, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল আজিজ পাটোয়ারী প্রমুখ।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/